এই বাজারে পাঁচ টাকার তরকারি বা মসলাসহ চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনতে পারেন ক্রেতারা। অল্পখরচে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য পাওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাজারটি। এখানকার বেশিরভাগ ক্রেতা-বিক্রেতাই নারী হওয়ায় তা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ‘বৌ বাজার’ নামে।
যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে দুই শতাধিক সংগ্রামী নারীর। তাদেরই একজন পুরানবাজার এলাকার বরফ কল শ্রমিক নজরুল ইসলামের স্ত্রী শিল্পী বেগম। সংসারের চাকা সচল রাখতে ৪ বছর আগে স্বামীর পাশাপাশি কাজে নামেন শিল্পী। স্বামী-স্ত্রীর কষ্টার্জিত আয়ে ঘুরছে তাদের সংসারের চাকা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শিল্পী বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী যে ইনকাম করে সেটা দিয়ে আমাদের সংসার চলে না। সেজন্য আমিও তাকে এই কাজের মাধ্যমে সাহায্য করছি।’
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শিল্পী বেগম। ছবি: এখন টিভি
আরেক সংগ্রামী নারী সেলিনা আক্তার। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই এই নারী স্বামী মারা যাওয়ার পর জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে এক সময় নদীতে মাছ ধরতেন। নানান প্রতিকূলতায় বন্ধ হয় সেই আয়ের পথ। অবশেষে আশ্রয় হয় বৌ বাজারে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সেলিনা আক্তার বলেন, ‘এই বাজারে কাজ করি । আর এখন ডাল-চালের ব্যবস্থাও আল্লাহ আমাকে করে দিছে।’
তাদের মতো অনেক অসহায় নারী জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে সহায় হয়ে উঠেছে বৌ বাজার। চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার নতুন রাস্তায় অবস্থিত বৌ বাজারে দুই শতাধিক নারী রাস্তার দুই পাশে বসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
বিক্রেতাদের মধ্যে একজন জানান, যারা গরিব তারা দশ টাকা, পাঁচ টাকার বাজার এখান থেকে নিয়ে খায়। আরও একজন বলেন, পাঁচশো থেকে এক হাজার টাকা যদি এখান থেকে ইনকাম করতে পারি তাহলে আমরা ভালোভাবে সংসারটা চালাতে পারি।
দৈনিক সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলা বাজারে ক্রেতাদের প্রায় সবাই অস্বচ্ছল, নিম্ন আয়ের মানুষ।
ক্রেতাদের মধ্যে একজন জানান, এখান থেকে কম দামে বাজার নিতে পারি। গরিবের জন্য এই বাজারই ভালো। ৫ টাকার ১০ টাকার বাজার যে সময় যেমন পারি নিয়ে খায়।
প্রান্তিক জনপদের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি এই বাজারে ব্যবসা করে নারীরা তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করার পাশাপাশি ভূমিকা রাখছেন সংসারে। ভালো পুঁজি পেলে বাড়বে তাদের ব্যবসার পরিধি।
চাঁদপুর উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক নাজমা আলম বলেন, ‘উইমেন চেম্বার চেষ্টা করছে কিভাবে তাদের এই পুঁজিটা বাড়ানো যায়। এখানে বাড়ানো হলেও কিন্তু তাদের উন্নয়নটা আরো উন্নত হবে।’
প্রায় দেড় দশক আগে গড়ে তোলা বাজারটিতে বর্তমানে দুই শতাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকানি বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন। যেখানে প্রতিদিন বেচাকেনা হয় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার পণ্য।