এশিয়া
বিদেশে এখন
0

সংকটে পশ্চিমবঙ্গের ফুল ব্যবসায়ী, ঢাকিসহ নানা পেশার মানুষ

শারদীয় দুর্গাপূজার ঠিক আগ মুহূর্তে ভারি বৃষ্টির কবলে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ বেশ কয়েকটি জেলা। নীল শুভ্র শরৎ সকালে কালো মেঘের চোখ রাঙ্গানি দেখে বেজার উৎসব প্রিয় বাঙালি। সবচেয়ে বেশি সংকটে রাজ্যের ফুল ব্যবসায়ী, ঢাকি থেকে শুরু করে পূজার সাথে জড়িত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। অতিবৃষ্টিতে পদ্ম ফুলের যোগান কমে যাওয়ায় পূজার আগে দাম নিয়ে শঙ্কায় আয়োজকরাও। আর কলকাতায় আর জি কর-কাণ্ডের জেরে পূজার পরিসর ছোট হয়ে আসায় ভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন বাংলার ঢাকিরা।

দেবী দুর্গার বোধন থেকে বিসর্জন। ঢাকের বাজনা ছাড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায় বাঙালির প্রাণের উৎসব। সারা বছর ধরে দেবীর আগমনের অপেক্ষায় দিন গোনেন বাংলার ঢাকিরা। বছরের এই ৫ দিনের রোজগারে ভরে উঠে ঢাকিদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। দুর্গাপূজা থেকে দীপাবলি পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটে ঢাক বাদকদের। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়িয়ে নেপাল, এমনকি ভুটানেও ডাক পড়ে তাদের।

কলকাতায় আর জি করের নারী চিকিৎসক হত্যাকাণ্ডের জেরে এবার সীমিতভাবে পূজা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাম করা বেশ কিছু ক্লাব ও পূজা উদযাপন কমিটি। উপায় না পেয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও বায়না নিতে বাধ্য হচ্ছেন ঢাকিরা। গ্রাম থেকে শহর কলকাতা, ছুটছেন মুম্বাই, গুজরাট, আহমেদাবাদ এমনকি ব্যাঙ্গালুরুতেও। শুরু হয়েছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। চলছে মহড়াও।

পুরো বছর ধরে অর্থকষ্টে দিন পার করেন এই ঢাকিরা। অভাবের তাড়নায় পিতৃপুরুষের পেশা ছেড়েছেন এমন উদাহরণ আছে অসংখ্য। আর, পূজার ৫ দিন অর্থের সন্ধানে পরিবারের সাথে উৎসবের আনন্দ ভাগ করার সুযোগও পান না তারা। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে নিজের চাওয়া পাওয়াকে বিসর্জন দেন অবলীলায়।

ঢাকিদের মধ্যে একজন জানান, আগে দেশেই ঢাক বাজাতাম। কিন্তু এখন দুটো পয়সা বেশির জন্য বাইরে যায়। পরিবার ছেড়ে যেতে খুবই কষ্ট হয়।

ত্রেতা যুগে সীতাকে রাবণের কবল থেকে উদ্ধার করতে শরৎকালে মায়ের অকাল বোধন করেন রাম। রামায়নের বর্ণিত আছে, মা দুর্গাকে সন্তুষ্ট করতে ১০৮টি পদ্ম দিয়ে মায়ের পূজার করেছিলেন তিনি। সেই রীতি অনুসরণ করে আজও ১০৮টি পদ্ম ছাড়া অষ্ঠমীর পূজা সম্পন্ন হয়না। তাই পূজার ১৫ দিন আগে পদ্ম জোগাড় করে হিমাগারে সংরক্ষণ করেন ফুলচাষিরা।

অতিবৃষ্টিতে পদ্মের যোগান কম । ছবি: সংগৃহীত

এবার অতিবৃষ্টিতে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, বাঁকুড়া, বীরভূমের মতো জেলায় পদ্মের যোগান কম। অথচ এই এলাকগুলোতে পদ্মের চাষ হয় সবচেয়ে বেশি।

এছাড়া পূজার ৭ দিন আগে থেকে কোলাঘাট ও দেউলিয়া ফুল বাজারে পদ্মের দামও অতিরিক্ত চড়া। সংশ্লিষ্ট বলছেন, এবার পূজায় উড়িষ্যার থেকে আসা পদ্মের ওপর নির্ভর করতে হবে আয়োজকদের। অষ্টমীর সকালে প্রতিটি পদ্মের দাম ২০ থেকে ৫০ রুপি পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

ফুল বিক্রেতাদের মধ্যে একজন জানান, আজ থেকে ১৫ দিন আগে প্রচু পরিমাণে ফুল ছিল। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে পদ্ম নাই। এই বাগানেরই কিছু ফুল স্টোরেজ করা আছে যেগুলো ৫ থেকে ৬ টাকায় বিক্রি হত। পূজার সময় ১৫ থেকে ২০ টাকা দাম হবে।

সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, পূজায় বিশাল পরিমাণ এই পদ্মোর চাহিদা মেটাতে গেলে এই রাজ্যের বাইরে থেকেও পদ্ম আমদানি করা হতে পারে।

মা দুর্গা এবার মর্তে আসছেন দোলা বা পালকিতে চড়ে। দুর্যোগ, মহামারি, ভূমিকম্প, যুদ্ধ ও অতিমৃত্যুসহ নানা অশনি সংকেত নিয়ে আসছেন তিনি। যদিও তিনি ফিরবেন হাতিতে। দেবীর গমন হাতিতে হলে মর্ত্যলোক ভরে ওঠে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে। তাই দুর্যোগ নিয়ে এলেও ফেরার সময় সব শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবেন মা দুর্গা এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।