এশিয়া
বিদেশে এখন
0

তেহরানের বিশ্বাসঘাতকতায় প্রাণ গেল নাসরাল্লাহর!

মিত্র ও অন্যতম প্রধান সমর্থক খোদ ইরানই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ'র সঙ্গে। তেহরানের কারণেই প্রাণ দিতে হয়েছে লেবাননের প্রভাবশালী নেতা ও হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ'কে। ফ্রেঞ্চ পত্রিকা 'লা প্যারিজিয়ে'তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিজবুল্লাহ প্রধান যে আবাসিক ভবনের বাঙ্কারে সংগঠনটির প্রধান কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন, সেই তথ্য ইসরাইলের সামরিক বাহিনীকে দিয়েছে ইরান।

গেলো বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার কোন আভাস না পেলেও সেই অভিজ্ঞতা ইসরাইলকে নিয়ে গেছে অন্যমাত্রায়। শুক্রবার যে সুপরিকল্পিত হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী, তাতে ব্যবহার করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি শক্তিশালী ২ হাজার পাউন্ডের আইবি বোমা। নাসরাল্লাহ লুকিয়ে ছিলেন বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলের দাহিয়ে'তে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড কমপ্লেক্সে।

সংবাদ মাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ বলছে, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ শঙ্কায় থাকায় জনসমক্ষে খুব একটা আসতেন না হিজবুল্লাহ প্রধান। কিন্তু হিজবুল্লাহ'র তথ্য গোপনীয়তায় কোন ঘাটতি থাকায় ইসরাইল জানতো, নাসরাল্লাহ ও সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা গোপনে কোথায় বৈঠক করবেন, এবং সেখানেই বোমা হামলার নির্দেশ দেয় তেল আবিব।

তবে নাসরাল্লাহ হত্যাকাণ্ড নিয়ে এবার চাঞ্চল্যকর এক তথ্য দিয়েছে ফ্রেঞ্চ পত্রিকা লা প্যারিজিয়ে।

সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নাসরাল্লাহ কোন বাঙ্কারে আছেন এই তথ্য ইসরাইলি সামরিক বাহিনীকে দিয়েছে খোদ হিজবুল্লাহরই প্রধান সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষক ইরান। আর এই তথ্য সত্যি হলে হিজবুল্লাহ'র প্রধান সমর্থক ইরান হতে পারে প্রশ্নবিদ্ধ।

ফ্রেঞ্চ পত্রিকাটির তথ্য অনুযায়ী, নাসরাল্লাহ কখন হিজবুল্লাহ'র বাঙ্কারে থাকবেন আর অন্য শীর্ষ সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন, এই তথ্য ইসরাইলকে দিয়েছেন এক ইরানি নাগরিক। শুক্রবার হিজবুল্লাহ'র পক্ষ থেকে হাসান নাসরাল্লাহ'র মৃত্যুর খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে প্রকাশের পর হিজবুল্লাহ ঘোষণা দেয়, তাদের নেতা আর নেই।

প্রতিবেদন বলছে, হামলার আগে এই এলাকায় নজর রাখছিল ইসরাইল। এলাকায় যে যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা ছিলো, সেগুলো কয়েকদিন ধরে এলাকাটিতে অবস্থান করছিলো। হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই নির্দেশনা আসে কোথায় হামলা করতে হবে। সেসময় যুদ্ধবিমান এফ ওয়ান ফাইভ ওয়ান এতো বিস্ফোরকে পরিপূর্ণ ছিলো, যা লক্ষ্যবস্তুসহ আশপাশের ভবন গুড়িয়ে দিতে যথেষ্ট ছিল।

শনিবার ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর ভিডিওতে দেখা যায়, হাতজারিম বিমানঘাঁটি থেকে একযোগে উড়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৮টি এফ ওয়ান ফাইভ ওয়ান যুদ্ধবিমান। এরমধ্যে একটিতে অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্রও ছিলো। বিশ্লেষকদের মতে, সেগুলো ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বোমায় পরিপূর্ণ।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবনটিতে হামলা চালানোর জন্য ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বোমা আর ক্ষেপণাস্ত্র একসঙ্গে ব্যবহার করেছে। অপারেশন নিউ অর্ডারে আইডিএফ শতাধিক যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যেগুলো প্রতি দুই সেকেন্ডে ভূপাতিত হয়েছে। প্রথমে আশঙ্কা করা হয়েছিলো এই হামলায় ৩ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

তবে হিজবুল্লাহ নিশ্চিত করেছে মৃতের সংখ্যা ১১। তারা জানায়, নাসরাল্লাহ জানতেন এখানে হামলা হবে, যে কারণে হিজবুল্লাহ'র প্রধান কার্যালয় তিনি স্থাপন করেছিলেন আবাসিক ভবনের নিচে।

হাতজারিম বিমানঘাঁটির কমান্ডাররা বলছেন, পুরো বিষয়টি গোয়েন্দা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, নাসরাল্লাহ কেন সেদিন সংগঠনের অন্য সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসলেন? ইসরাইলের কমান্ডাররা বলছেন, যোগাযোগ যন্ত্রে বিস্ফোরণের পর হিজবুল্লাহ আর কোন ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসে আস্থা রাখতে পারছিলো না। যে কারণে গোপনে স্বশরীরে বৈঠককেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন হিজবুল্লাহ প্রধান। আর সেখানেই প্রাণ গেছে প্রভাবশালী নেতা হাসান নাসরাল্লাহর।