দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের পরিস্থিতি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এরইমধ্যে নিরুপায় হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছে রাজ্য সরকার। আন্দোলন বিক্ষোভ দমাতে কারফিউ জারি করে বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। মেইতেই ও কুকি বিদ্রোহীদের সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
রাজ্যে একতা বজায় রাখতে সব চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং। এবার এগিয়ে এলেন কংগ্রেসের সংসদ সদস্য বিমল বিমল আকোইজাম। চলমান অস্থিরতার দমাতে কার্যকর পদক্ষেপ চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। রাজ্যের অশান্ত পরিবেশের জন্য অবৈধ অভিবাসী, বিদেশি অস্ত্র ও মাদক কারবারিদের দায়ী করছেন এই কংগ্রেস নেতা। মণিপুরের প্রতি বিজেপি সরকারের অবহেলাকেও দায়ী করেন বিমল।
ড. এ বিমল আকোইজাম বলেন, 'ভারতে বহু ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা ও জাতির বসবাস। তাই এই দেশে জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক ইস্যুগুলোকে নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে। এসব নিয়ে রাজনীতি করলে সব ধ্বংস হয়ে যাবে।'
এদিকে, মণিপুরের সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোদি সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। তার শঙ্কা, দ্রুত সমস্যার সমাধান না করলে পরিস্থিতি ভিন্নরূপ নিতে পারে।
কনরাড সাংমা বলেন, 'আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বারবার অনুরোধ জানিয়েছি তাদের শক্ত অবস্থান নেয়া জরুরি। রাজ্যে যদি আমরা শান্তি ফিরিয়ে আনতে না পারি এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে না পারি তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।'
সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মণিপুর থেকে আসাম রাইফেলস ব্যাটালিয়নকে সরিয়ে নেয়া হয়। এবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে মণিপুরে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের দুই হাজার ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের তেলেঙ্গানা ও ঝাড়খণ্ড থেকে সরিয়ে মণিপুরে পাঠানো হয়।
এদিকে, দুই দিন আগে রাজ্যের জিরিবাম এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর কমান্ডারদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করেন মেইতেই ও হামার নেতারা। মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কুকিদের বিরুদ্ধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তারা।
গত বছরের মে মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়ায় পাহাড়ের আদিবাসী কুকি জনগোষ্ঠী। গেল সপ্তাহে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বেশ কয়েকজন নিহতের জেরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যে। এতে, যতই দিন যাচ্ছে, রাজ্যটিতে দেখা দিচ্ছে ভাঙনের শঙ্কা।