ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত 'বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু' চালু হয় ১৯৯২ সালে ১ জানুয়ারি। স্থানীয়দের কাছে এটি 'পাটগুদাম সেতু' নামে পরিচিত। ময়মনসিংহের সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা ও শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ সহজ করে এই সেতু।
প্রায় ৪৩ কোটি টাকা টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৪৫৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি চালুর দিন থেকেই টোল আদায় শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। শুরুতে প্রতি বছর ইজারা দিয়ে টোল আদায় করা হলেও ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ইজারা দেয়া হয় তিন বছরের জন্য। ব্রিজ পারাপারে প্রকারভেদে প্রতিটি যানবাহন থেকে আদায় করা হতো ১০-২৭০ টাকা।
সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বন্ধ করে দেয়া হয় টোল আদায়। এতে খুশি হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, যানবাহন চালক ও চলাচলকারীরা। তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের হয়রানি থেকে মুক্তি মিলেছে তাদের। কমেছে টোলপ্লাজা এলাকার চিরচেনা যানজট।
মিনি ট্রাক চালক সুজন মিয়া বলেন, 'কয়দিন পরপরই বাড়িয়ে দেয়া হতো টোলের টাকা। এটি বন্ধে খুশি হয়েছি। ঈদ বা যেকোনো উৎসবের সময় টোলপ্লাজার সামনে বড় যানজট লেগে থাকতো। এখন আর তা হবে না।'
আন্দোলনকারী নাফিউস সুলতান রোহান, জাহিদ হাসান রনক, বোরহান সুলতান মুগ্ধ জানান, ৬ আগস্ট শিক্ষার্থীরা টোল আদায় বন্ধ করে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে তাদের সড়ক ও জনপথ বিভাগ যেতে বলে। পরে সড়ক ও জনপথ বিভাগে গিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে টোল বন্ধের কথা বলেন তারা।
এদিকে টোলপ্লাজা এলাকায় যান চলাচলে শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কেউ যেন টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি না করতে পারে সেজন্য পালাক্রমে দায়িত্বপালন করছে শিক্ষার্থীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গকুল সূত্রধর মানিক ও তাহমিদ রেদোয়ান জানান, সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসকের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি 'পাটগুদাম সেতু'র টোল আদায় বন্ধের দাবি তোলা হয়। তাদের দাবিতে সাময়িকভাবে টোল বন্ধ হলেও স্থায়ী বন্ধের জন্য জানান তারা।
সেনাবাহিনীর ৪০৩ ব্যাটল গ্রুপের কমান্ডার কর্নেল মাহমুদ হাসান সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে বলেন, 'শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সেতুটির টোল আদায় সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।'
ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সাগরময় রায় বলেন, 'জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাময়িকভাবে টোল আদায় বন্ধ করা রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।'
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সেতুটির ওপর দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। টোল ইজারা দিয়ে ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২১৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। চলতি বছর ৫৬ কোটি টাকায় তিন বছরের জন্য নতুন করে ইজারা দেয়া হয়েছে। এর আগে ইজারামুল্য ছিল ৪৮ কোটি টাকা।
৩২ বছরে এই টোলপ্লাজায় বসেই টোল আদায় হয়েছে সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের কয়েকগুণ। সবশেষ দু'বার ইজারা দিয়েই নির্মাণ ব্যয়ের চেয়ে প্রায় ৩২ কোটি টাকা বেশি আয় করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। যদিও সিন্ডিকেট ইজারায় প্রতিবারই সরকার হারিয়েছে বিপুল অংকের রাজস্ব। চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় ইজারা সিন্ডিকেটকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি ছাত্র-জনতার।