কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রথম থেকেই পূর্ণ সমর্থন দিয়ে গেছেন বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অন্যান্য দেশের পাশাপাশি এ তালিকায় ছিল কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের নামও। এর অংশ হিসেবে গেল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রাখেন তারা।
এই সময়ে বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা আসলেও বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিট্যান্সে বড় ধরনের ধস নামে। টান পড়ে দেশের রিজার্ভেও। শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি পূরণ হওয়ায় নতুন আলোর পথে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এতে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মনেও যেন ফিরে এসেছে স্বস্তি। তাই এখন থেকে পূর্ণ উদ্যোমে দেশ গড়ার কাজে নেমে পড়তে চান তারা।
দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাসহ মধ্যপ্রাচ্যে থাকা প্রবাসীরা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে জনমত গড়ে তুলতেই এই উদ্যোগ বলে জানান তারা। এতে চলতি আগস্টে বছরের দেশের রিজার্ভে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স যুক্ত হবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
একজন প্রবাসী বলেন, 'আমরা রেমিট্যান্স বন্ধ করে যেরকম একটা প্রেসার ক্রিয়েট করেছিলাম, এখন আমাদের দায়িত্ব হবে, যে যার অবস্থান থেকে যকটুকু সম্ভব বৈধপথে আমার রেমিট্যান্স দেশে পাঠানো শুরু করে আমরা আমাদের দেশ বিনির্মাণে প্রত্যক্ষভাবে যেন অংশগ্রহণ করি।'
বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর গুরুত্ব আরও নানাভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দুর্নীতিবাজরা দেশে থাকা অবৈধ অর্থ হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিদেশে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। এক্ষেত্রে প্রধান টার্গেট হতে পারেন সাধারণ প্রবাসীরা। তাই এখন থেকেই হুন্ডি বা অবৈধপথে দেশে অর্থ না পাঠানোর আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সিকদার বলেন, 'এই দুর্নীতিবাজদের যতি আটকাতে চাই, যারা দেশ থেকে টাকা পাচার করতে চাচ্ছে, অলরেডি করেছে এবং এখনও করার চেষ্টা করছে। এটা বন্ধ করতে হলে আমাদের কোনোভাবেই হুন্ডির মাধ্যমে টাকা দেয়া যাবে না।'
গেল জুলাইয়ে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আসে ১৩৩ কোটি ডলার। মধ্যপ্রাচ্য-মালয়েশিয়ার পাশাপাশি এখন ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলো থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ উর্ধ্বমূখী। যা দেশের কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আশা যোগাচ্ছে।
জালাল উদ্দিন সিকদার বলেন, 'নতুন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে, আমাদের বৈদেশিক ঋণের টাকা পরিশোধ করা। ম্যাক্রো ইকোনোমি সচল রাখার জন্য যে বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন সেটা না পেলে সরকারের পক্ষে দেশ পরিচালনা করা খুবই কষ্ট হয়ে যাবে।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জুনে প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল। যার পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি।