গাড়ি যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি বিলাসী পণ্যগুলোর মধ্যেও একটি। তবে প্রাইভেট কার ব্যবহারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়ে। যেখানে ভারতে প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে গড়ে ব্যক্তিগত গাড়ি আছে ২২ জনের, আর মায়ানমারে সে সংখ্যা ১২। সেখানে বাংলাদেশে এই হার ২ দশমিক ৫।
বাংলাদেশের মোটরগাড়ি শিল্প দক্ষিণ এশিয়ার মাঝে তৃতীয় বৃহত্তম। যার পুরোটাই আমদানিমুখী। তবে, দেশে গাড়ির চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ২০২২ সালের এক গবেষণার তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের এক কোটি বিশ লাখ মধ্যবিত্তের গাড়ি কেনার আয় আছে এবং তারা গাড়ি কিনতেও আগ্রহী। প্রতি বছর এই সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে।
তবে এই মূল্যস্ফীতির বাজারে গাড়ি কেনা দিন দিন কঠিন হচ্ছে বলে মনে করেন ক্রেতারা। কর বৃদ্ধি ও তার সাথে পাল্লাদিয়ে গাড়ির দাম বাড়াও একটি বড় কারণ বলে মত অনেকের।
গাড়ি কেনার স্বপ্ন অনেকের থাকলেও সেই স্বপ্ন পূরণ হয় না বেশিরভাগেরই। তবে সবার কাছে গাড়ি পৌঁছে দিতে, দাম সাধ্যের মধ্যে আনার চেষ্টার কথা জানালো বাংলাদেশি গাড়ির ব্যান্ড টাইটান।
বাংলা কারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, 'আমাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল যে বাংলাদেশে আমরা প্রথম ম্যানুফ্যাকচারিং করবো। আমরা আজকে কিন্তু ওটা দিয়ে সফল। আমরা জাপান থেকে ইঞ্জিন এন, চীন থেকে বডি নিয়ে এনে এখন সফল একটি গাড়ি তৈরি করতে পেরেছি যার নাম হচ্ছে টাইটান।'
এবছর আধুনিক সব প্রযুক্তি আর নান্দনিক মডেলের ২টি গাড়ি বাজারে এনেছে দেশিয় গাড়ি ম্যানুফ্যাকচারিং ও উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বাংলা কার। গাড়ির ২৫ শতাংশ বাংলাদেশে তৈরি করে ২ কোটি মূল্যের গাড়ি দিচ্ছেন ৭০ লাখ টাকায়। সেজন্য বিলাসবহুল গাড়ির স্বাদ কম দামেই পূরণ হচ্ছে।
জাকির হোসেন বলেন, '২০ থেকে ২৫ শতাংশ আমরা লোকালভাবেই সংগ্রহ করছি। বাংলাদেশে কম্পেরেটিভ গাড়ি নিলে দাম হবে দুই কোটি টাকা, যেটা আমরা ৭০ লাখ টাকায় দিচ্ছি।'
শুধু দেশের বাজারে নয়, গাড়ি রপ্তানি করার কথাও জানান এই উদ্যোক্তা।
গ্রাহকদের মাঝেও বেশ সারা জাগিয়েছে এই গাড়িগুলো।
একজন ক্রেতা বলেন, 'আমি যখন এই গাড়ি চালাই, প্রথমেই আমার গাড়ির হ্যান্ডেলিং কোয়ালিটিটা অনেক বেশি ভালো লাগছে। জাপানিজ লাক্সারিয়াস গাড়িগুলো আছে, তার থেকে এটা কোনো অংশেই কম না। গাড়ির আউটলুকও অনেক সুন্দর।'
দেশের প্রথম বৈদ্যুতিক মিনি ট্রাকও আছে এখানে। একবার চার্জে চলবে ৫৫০ কিলোমিটার পথ। এতে ব্যয় কমে আসবে অনেকটাই।
বাংলা কারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আব্দুস সাত্তার বলেন, 'প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে, এমনকি পাহাড়ি অঞ্চল থেকেও শাক-সবজি পরিবহণ যারা করে, ডিজেল বা পেট্রোলের থেকে কম খরচে তারা এটা করতে পারবে।'
২০২২ সালে প্রতিবেশি দেশ ভারতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতের মোটরগাড়ি শিল্প উৎপাদন ও মূল্যায়নের দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম। ভারতের গাড়ি শিল্পের মূল্য ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং এটি দেশের মোট রপ্তানির ৮ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশ মাত্র যাত্রা শুরু করছে গাড়ি উৎপাদনের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে বাংলাদেশে গাড়ির সরঞ্জাম উৎপাদনের দিকে আরও মনোযোগী হতে হবে।
বারভিডার সেক্রেটারি মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, 'এখানে গাড়ির দরজা বানাই না, সিট বানাই না, গাড়ির স্টিয়ারিং বানাই না, আমাদের এখানে তো কিছুই প্রডাকশন হয় না। যখনই ইন্ডাস্ট্রি আমদানি থেকে সহজ হবে, তখন কিন্তু সবকিছুরই দাম কমে যাবে। সে সময় বিদেশি মুদ্রারও দাম বেড়ে যাবে। সেজন্য সরকারের একটা সুনির্দিষ্ট পলিসি দরকার।'
বাংলা কারের মতো বাংলাদেশি গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্রমেই বাড়লে কমে আসবে গাড়ি দাম। আমদানিমুখী এ খাত হয়ে উঠবে রপ্তানির বড় হাতিয়ার, ভূমিকা রাখবে জিডিপিতেও।