ব্যাংকপাড়া
অর্থনীতি
0

ইন্টারনেট না থাকায় স্থবির অর্থনীতি; বন্ধ ছিল এটিএম বুথ, ব্যাংক-শেয়ারবাজার

দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আসতে শুরু করেছে। এর আগে গেল কয়েকদিন ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় আর্থিক লেনদেন অনেকটাই সীমিত হয়ে পড়ে। বন্ধ ছিল ব্যাংক ও শেয়ারবাজার। সেই সাথে জরুরি প্রয়োজনেও বেশিরভাগ ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারেনি অনেক গ্রাহক। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

ব্যাংকের একজন গ্রাহক বলেন, ‘গত বুধবারের পর থেকে আজকেই প্রথম টাকা তুলতে পারছি। যার যার নিজস্ব ব্যাংকের বুথে টাকা উঠানো যাচ্ছে। অন্য ব্যাংকের বুথে উঠানো যাচ্ছে না।’

ছয়দিন পর এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পেরে এমনভাবেই স্বস্তির কথা জানালেন ফারজানা আক্তার। জরুরি প্রয়োজন হলেও বহু চেষ্টাতেও গত বুধবার থেকে টাকা তুলতে পারছিলেন না তিনি।

দেশব্যাপী ৬১টি ব্যাংকের এটিএম বুথের সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। এর সাথে টাকা জমা ও উত্তোলন মেশিন রয়েছে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি। আগে এ সুবিধা শুধু প্রধান সড়কে থাকলেও এখন অলিগলিতে পৌঁছে গেছে।

টাকা জমা ও উত্তোলন সহজ হলেও সম্প্রতি দেশব্যাপী ইন্টারনেট সমস্যায় সংকটে পড়েন এটিএম কার্ডধারীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একদিকে হাতে নগদ অর্থের প্রবাহ কম, অন্যদিকে বুথ থেকেও টাকা তুলতে পারছিলেন না গ্রাহকরা। যদিও দু-একদিন পর রেডিও লিংক ব্যবস্থায় কিছু বুথ সচল করে কয়েকটি ব্যাংক।

বুথে থাকা নিরাপত্তা কর্মী বলেন, ‘দেশব্যাপী ইন্টারনেট সমস্যায় কিছু বুথ সচল থাকলেও অন্যগুলো থেকে টাকা উত্তোলন করা যাচ্ছিল না।’

এছাড়া ব্যাংকের অনলাইন সিস্টেম সচল না থাকায় বন্ধ থাকে সাধারণ কার্যক্রম। গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় ম্যানুয়ালি কাজ চলে। ফলে ক্রেডিট কার্ডসহ নানা ধরনের বিল নির্ধারিত সময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হয় অনেক গ্রাহক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অতিরিক্ত কোনো টাকা না কাটার সিদ্ধান্ত নেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যারা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবসা করে তাদের মধ্যে কয়েকটি ব্যাংক অতিরিক্ত কোনো টাকা না কাটার সিদ্ধান্ত নেয়। নির্ধারিত সময়ে যেসব গ্রাহক টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কোনো টাকা কাটা হবে কিনা সে বিষয়ে অফিস খোলার পর বাকিরা সিদ্ধান্ত নেবে।’

এদিকে ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। এ খাতের বিনিয়োগকারীরা প্রয়োজনে অর্থ তুলতে পারেননি। এতে লোকসানে পড়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো।

দুর্যোগে যাতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত না হয় সেজন্য বেশিরভাগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একাধিক ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে থাকে। তবে সম্পূর্ণ ইন্টারনেটবিহীন অবস্থা এ খাত এবারই প্রথম প্রত্যক্ষ করছে। ফলে একটি কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থার দাবি সংশ্লিষ্টদের।

ব্র্যাক ব্যাংকের ভাইস চেয়ারপারসন ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন, ‘রেডিও লিংক ব্যবহার করে তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।  এই যে বিকল্প পদ্ধতি আছে সেই ব্যবস্থা সব ব্যাংকের নিতে হবে।’

ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারের জন্য একটি আন্তঃরেডিও লিংক বা বিশেষ ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা স্টক এক্সচেন্জের চেয়ারম্যান হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু বলেন, ‘যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের এবং পুঁজিবাজারের রেগুলেটর বডি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেন্জ কমিশন এরা সমন্বিতভাবে বসে আন্তঃরেডিও লিংক বা বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় আনতে পারে।’

নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবার মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতের গতিশীলতা বজায় থাকে, না হলে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ার শঙ্কা থাকে।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর