স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবা: বাজার ধরবে নাকি হারাবে?

স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবা: বাজার ধরবে নাকি হারাবে? | Ekhon tv
0

দেশে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই স্টারলিংকের সংযোগ চালু হওয়ার কথা। কিন্তু এর সাবস্ক্রিপশন ফি কী নাগালের মধ্যেই থাকবে নাকি বেশি মূল্যের স্টারলিংক সংযোগ বাজার হারাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হবে স্যাটেলাইটভিত্তিক এই সংযোগকে।

পৃথিবীর কক্ষপথ জুড়ে ছড়িয়ে আছে স্টারলিংকের ছোট ছোট স্যাটেলাইট। এসব স্যাটেলাইট থেকে বাসা বা প্রতিষ্ঠানে থাকা রিসিভারে আসবে ইন্টারনেট। সেখান থেকে রাউটার হয়ে পাওয়া দ্রুত গতির সংযোগ পাওয়া পাওয়া যাবে মোবাইল-কম্পিটারসহ নানা স্মার্ট ডিভাইসে।

১০০টি দেশে ব্যবসা করা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের স্টারলিংক পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশে। ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা নিতে বিনিয়োগ সম্মেলনে দেয়া হয়েছে ফ্রি ট্রায়াল।

অনুমতি মিলেছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডারও। এবার টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি থেকে অনুমোদনে কার্যক্রম চলছে। যা পেলেই গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দিতে পারবে স্টারলিংক।

এই স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবায় খরচ কেমন? বাংলাদেশে স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবার সম্ভাব্য দাম সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর খরচাপাতি ব্যয়বহুল।

ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, স্টারলিংক সংযোগ নিতে হলে একটি কিট কিনতে হয়। এতে একটি রিসিভার বা অ্যান্টেনা, কিক স্ট্যান্ড, রাউটার, ক্যাবল ও পাওয়ার সাপ্লাই থাকে। যার দাম ৩৪৯-৫৯৯ মার্কিন ডলারের মধ্যে। বাংলাদেশে যা ৬০-৭০ হাজার টাকা হতে পারে। আর প্রতিমাসে সম্ভাব্য সাবস্ক্রিপশন ফি হতে পারে ১২-১৭ হাজার টাকা।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভুটানে স্টারলিংকের সেবা রয়েছে। সেখানে আবাসিকে খরচ ৪ হাজার ২০০ ভুটানিজ গুলট্রাম। যা প্রায় ৫ হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়াও শুরুতে সংযোগ নিতে খরচ পড়ে ৩৩ হাজার ভুটানিজ গুলট্রাম বা ৪৬ হাজার টাকা।

বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, স্টারলিংক ইন্টারনেটে প্রত্যন্ত ও বিরান অঞ্চলে সেবা সহজে মিলবে। কিন্তু খরচ বেশি হলে ব্যবহারকারীরা কতটা আগ্রহী হবে?

অ্যামটবের সাবেক মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবীর বলেন, ‘আমরা জানি বৈশ্বিকভাবে তাদের প্রাইস অনেক হাই। সেটা বাংলাদেশের প্রাইস মডেল হলে অ্যাফোর্ডেবল হবে না। বাংলাদেশের জন্য ডিফারেন্ট প্রাইস মডেল হওয়া দরকার এবং যারা বর্তমানে পরিষেবা দিচ্ছে তাদেরকেও এ প্রতিযোগিতায় রাখতে হবে। যাতে সবাই মিলে কাজটা করতে পারে।’

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মতোই যদি কম খরচে স্টারলিংক ইন্টারনেট দেয়া যায় তাতে জনপ্রিয়তা বাড়বে। ব্রডব্যান্ড যেখানে যেতে পারছে না; সেখানেও নির্বিঘ্ন সেবা পাবে ব্যবহারকারীরা।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, ‘কোয়ালিটি সম্পন্ন বা ভালো মানের ইন্টারনেটের খরচ প্রতি এমবিপিএস ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। এ দাম বা এর থেকে ১৫-২০ শতাংশ বেশিতে স্টারলিংকের পরিষেবা যদি দেয়া যায় তাহলে আমার মনে হয় ব্রডব্যান্ডের যে পেনেট্রেশন এটা আরো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়ে যাবে।’

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির ব্যবস্থাপক বলছেন, গ্রাউন্ড স্টেশন, মাঠ পর্যায়ের ডিস্ট্রিবিউশন প্যানেল, অভিজ্ঞ লোকবল ও স্যাটেলাইট পরিচালনাসহ তাদের কারিগরি সক্ষমতা আছে।

সরকার চাইলে শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে স্টারলিংকের পরিষেবা দেয়া সম্ভব। খরচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উন্নত রাষ্ট্রের আদলে নয়, বরং তৃতীয় বিশ্বের বাজার হিসাবে ইন্টারনেট প্যাকেজ দিলে তা সাধারণ গ্রাহকের নাগালে আসবে।

বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইমাদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক প্রিমিয়াম কাস্টমার রয়েছে। যারা একটু বেশি খরচ হলেও রিলায়েবল কানেক্টিভিটি চায়। যেখানে ফাইবার বা মোবাইল কানেকশন নেই, সেখানে তারা রিলায়েবল কানেক্টিভিটি চান। তো সেসব গ্রাহকের জন্য আমি মনে করি এটা ভালো হবে।’

আফ্রিকার কিছু দেশে ১০ থেকে ৩০ ডলারের মধ্যে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট দিচ্ছে স্টারলিংক। শুরুতে বাংলাদেশেও এমন কাছাকাছি মূল্যে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করার পক্ষে মত পরামর্শকদের।

এএইচ