আগামী ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের। তবে সময় বাড়ানো হয়েছে আরও এক বছর। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে উৎপাদনে যেতে পারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।
পরিকল্পনা অনুসারে প্রথম ইউনিট থেকে পরীক্ষামূলক উৎপাদনের কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। আর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর কথা ছিল তেইশের ডিসেম্বরে। এরপর এটি পিছিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়। তবে গেল ফেব্রুয়ারিতে রাশান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৫ সাল পর্যন্ত। আর পুরো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৭ সাল পর্যন্ত। তবে, চুক্তি অনুযায়ী বাড়বে না প্রকল্প খরচ।
মূলত করোনা ও ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের সময়ে মূল প্রকল্প ও পিজিসিবির সঞ্চালন লাইনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে দেরি হওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে উৎপাদনে যেতেও। যদিও, আগামী ডিসেম্বরে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে যাওয়ার আশ্বাস বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'এখন আমরা অনবোর্ড। যে ধীর গতি ছিল তা নেই। আমাদের এখন মেইন বিষয় হচ্ছে যমুনা নদী পার দিতে হবে। এখানকার ট্রান্সমিশন লাইন একটা বড় বিষয়। সফলভাবে বিদ্যুৎ আনতে পারবো আগামী বছর শেষ নাগাদ।'
সঞ্চালন লাইন নিয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ বলছে তাদের কাজ শেষ হবে উৎপাদনে যাওয়ার আগেই। রূপপুর থেকে বাঘাবাড়ি পর্যন্ত ২৩০ কেভির মোট ৬৫ কিলোমিটার ও বগুড়া পর্যন্ত ৪০০ কেভির মোট ৯০ কিলোমিটার লাইন নির্মাণকাজ শেষ। সবশেষ জুন মাসে প্রস্তুত হয়েছে আমিন বাজার কালিয়াকৈর পর্যন্ত ৪০০ কেভির ৫১ কিলোমিটার লাইন। এছাড়া রূপপুর-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভির ১৪৬ কিলোমিটার লাইনের বাকি থাকা ১০ শতাংশ কাজ শেষ হবে আগামী সেপ্টেম্বরে। আর রূপপুর- ধামরাই ২৩০ কেভির ১৪৫ কিলোমিটার লাইনের বাকি ৫ শতাংশ রিভার ক্রসিং ও রূপপুর ঢাকা ৪০০ কেভির ১৪৭ কিলোমিটার লাইনের বাকি থাকা ১০ শতাংশেরও বেশি কাজ শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। এর মধ্যে রিভার ক্রসিং থাকায় সময় বেশি লাগছে কম দূরত্বেও।
রূপপুর প্রকল্পের মূল অংশে প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ ৯০ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বরে চুল্লিপাত্রে জ্বালানি প্রবেশ করানো শুরু হবে বলে জানালেন প্রকল্প পরিচালক।
রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. জাহেদুল হাছান বলেন, 'ভৌত কাঠামোর কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আমাদের বড় মাইলফলক চুল্লিপাত্রে জ্বালানি প্রবেশ করানো হবে এই ডিসেম্বর। আমরা আশা করছি, ধারাবাহিক কার্যক্রম শেষ করতে পারবো।'
এদিকে প্রকল্পে খরচের জন্য চুক্তি অনুযায়ী বছরে বরাদ্দ করা মোট অর্থের ১০ শতাংশ দেয় বাংলাদেশ। ডলারের সংকট ও দাম বাড়ায় নিয়মিত বিল পরিশোধ সহজ করতে গত মে মাসে আলোচনায় বসে দু'পক্ষ। এতে চুক্তির বাইরে গিয়েও টাকায় অর্থ নিতে রাজি হয় রাশান ঠিকাদারি সংস্থা রোসাটম। এতে কাজ আরও সহজ হয়েছে।
সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুরে গত বছরের ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের হাতে পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম চালান তুলে দেয় রাশিয়া। ৩৩তম সদস্য হিসেবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ ক্লাবে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। এ প্রকল্পে খরচ হবে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫২ কোটি আর রাশিয়া থেকে ঋণ–সহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা।