ভারতের পর এবার আলোচনার টেবিলে এসেছে যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন। নিয়ম মাফিক, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের কথা থাকলেও চলতি বছরের ৪ জুলাই নির্বাচনে তারিখ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। অক্টোবর মাসের আগে ভোট হবে না, শুরুতে এমন ধারণা করা হলেও, শেষ মুহূর্তে এসে পাল্টে গেছে আগাম হিসাব-নিকাশ।
৬৫০টি নির্বাচনী কেন্দ্র বা এলাকায় বিভক্ত বৃটেন। প্রতিটি এলাকা থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব করেন 'হাউস অফ কমন্সে'। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি সাথে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিচ্ছে লেবার পার্টি। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি অব ব্রিটেন, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস, রিফর্ম ইউকে, গ্রিন পার্টি ও সোশ্যালিস্ট পার্টি লড়বে বেশ কয়েকটি আসনে। নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, রেকর্ড চার হাজার প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন।
কনজারভেটিভ ও লেবার পার্টির এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবার নজর থাকবে বৃটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও স্যার কিয়ের স্টারমারের দিকে। ভোটের আগে গেল বুধবার (২৬ জুন) সবশেষ নির্বাচনী বিতর্কে মুখোমুখি হন দুই নেতা।
লেবার পার্টির প্রতিনিধি স্যার কিয়ের স্টারমার বলেন, 'গেল ১৪ বছরে রাজনীতিবিদরা শুধু নিজেদের কথাই ভেবেছেন। সংসদ সদস্যরা ব্যস্ত ছিলেন আখের গোছাতে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে বৃটেনের রাজনীতিতে আপাদমস্তক পরিবর্তন আনবো। রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য জনগণের সেবা করা, আমি সেটাই ফিরিয়ে আনতে চাই।'
দাপ্তরিক সূত্র ব্যবহার করে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বাজি ধরায় কনজারভেটিভ পার্টির নেতাদের প্রার্থীতা নিয়ে সুনাককে প্রশ্নবানে জর্জরিত করেন স্টারমার। আর, রাজনৈতিক সততা নিয়ে স্টারমারকে কড়া কথা শোনান সুনাক।
তিনি বলেন, 'নির্বাচনের তারিখ যা ঘটেছে তার কারণ অনুসন্ধানে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ও প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। কিয়ের স্টারমার নেতৃত্ব নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। জনগনের সাথে কোনো ধরনের ছল-চাতুরির আশ্রয় না নেয়াই নেতার কাজ। কিন্তু স্টারমার এসব মানেন না। কর বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে তিনি মানুষের সাথে সোজাসাপটা আলোচনা করছেন না। এতে করে মানুষ রাজনীতিবিদদের ওপর থেকে আস্থা হারাবে।'
এদিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সুনাক প্রশাসনের অবস্থানকে নীতিগতভাবে সমর্থন করেন না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন রিফর্ম ইউকে'র প্রধান।
রিফর্ম ইউকের নেতা নাইজেল ফ্যারাজ বলেন, 'আমি আগেই বলেছিলাম ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে। ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা পুতিনকে ইউক্রেন আক্রমণের পথ তৈরি করে দিয়েছেন। পুতিন রাশিয়ার নাগরিকদের বোঝাতে পেরেছেন, পশ্চিমারা তাদের দিকে তেড়ে আসছে। তাই, যুদ্ধ অনিবার্য।'
এবারের সাধারণ নির্বাচনে অর্থনৈতিক স্থবিরতা, আবাসন সংকট, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, অভিবাসন সংকট ও বৈদেশিক নীতির বিষয়গুলো আলোচনার শীর্ষে। রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, দেশটির অন্তত ৪৩ শতাংশ মানুষ অভিবাসনের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে মন্তব্য করেন। গাজার অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চান অন্তত ৭০ শতাংশ ভোটার। আলোচনায় রুয়ান্ডা নীতিও। আশ্রয়প্রত্যাশীদের রুয়ান্ডা পাঠাতে সুনাকের দেয়া প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনা কোনোভাবেই মানতে নারাজ লেবার পার্টির নেতারা।
সাম্প্রতিক জনমত জরিপে কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ঋষি সুনাক প্রতিদ্বন্দ্বী লেবার পার্টির প্রধান থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে। ৪০ শতাংশের ওপরে জনসমর্থন লেবার পার্টির। ডানপন্থী দল রিফর্ম ইউকে রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
নির্বাচনী প্রচারে নামার দ্বিতীয় সপ্তাহে ৪.৩ মিলিয়ন ইউরো তহবিল সংগ্রহ করে লেবার পার্টি। কনজারভেটিভদের সংগ্রহ সেখানে ৩ লাখ ইউরোর চেয়েও কিছুটা কম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুরুতে ঋষি সুনাককে যতটা দুর্বল মনে হচ্ছিলো, ধীরে ধীরে প্রতিপক্ষকে সরাসরি আক্রমণ করার মাধ্যমে সুনাক বেশ কিছুটা আলোচনায় ফিরেছেন।
ব্লুমবার্গ নিউজের রাজনৈতিক বিশ্লেষক অ্যাডাম ব্লেনফোর্ড বলেন, 'বিরোধীরা সুনাককে সরাসরি আক্রমণ করার কৌশল বেছে নিয়েছে। তবে, বিতর্কে নেমে সুনাকও বেশ কড়া জবাব দিয়েছেন। জরীপে কনজারভেটিভরা লেবার পার্টি থেকে ২০ পয়েন্টে পিছিয়ে আছে। প্রচারে বেশি সময় না পাওয়াইয় এই ব্যবধান কমার সম্ভাবনা কম।'
সম্ভাবনা আর হিসাব নিকাশে পিছিয়ে থাকলেও বৃটেনের সবচেয়ে কম বয়েসি প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও তার দল শেষ পর্যন্ত কতোটা প্রতিরোধ গড়তে যাচ্ছেন- এখন সেদিকেই নজর থাকবে বিশ্বের।