কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
দেশে এখন
0

ভেজাল বালাইনাশক নিয়ন্ত্রনে নেই পরীক্ষাগার

ভেজাল ও নিম্নমানের বালাইনাশকে প্রতিবছর মাটি, ফসল ও পরিবেশের কি ক্ষতি হচ্ছে তা টাকার অংকে হিসাব না থাকলেও বড় অংকের ক্ষতি যে হচ্ছে সেটি নিশ্চিত করেছেন কৃষি গবেষকরা। বগুড়ায় সার ও বালাইনাশক দ্রব্যের আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই শতাধিক। এসব প্রতিষ্ঠানে নেই মান নিয়ন্ত্রন ল্যাব। এমনকি সরকারিভাবেও কোনো তদারকি হয় না। এতে করে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষক। ঘটছে ফলন বিপর্যয়।

দিন রাত পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করেন কৃষক। সেই ফসলি জমিতে যদি পোকার আক্রমণ বা অন্যকোনো কারণে ফসল নষ্ট হয় তখন দিশেহারা হয়ে পড়েন কৃষক। সে সময় তারা ছুটে যান কীটনাশক বা অনুখাদ্যের দোকানে। কখনও এসবে কাজ হয়, কখনও পোকাড় আক্রমণ তেমনই থাকে। তারা জানেন না কি ধরনের কীটনাশক ও অনুখাদ্য দিচ্ছেন। মান নিয়ন্ত্রণ আছে কি না? বগুড়ায় দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠানে যে মান যাচাই না করে কীটনাশক এবং অনুখাদ্য বাজারজাত হচ্ছে সেসবের খোঁজ রাখেন না। তারা চান ভেজালমুক্ত সার কীটনাশক।

একজন কৃষক বলেন, 'যেভাবে আমরা আবাদ করি, তাতে ভেজাল ওষুধ দিয়ে তা কোনো কাজ করে না। বারবার ওষুধ দিয়েও ধানের পোকা যায় না।'

বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলায় প্রায় ৬০টির বেশি সার এবং বালাইনাশক জাতীয় দ্রব্যের আমদানীকারক উৎপাদক, পরিবেশক এবং বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে রানীর হাটে টেনস এগ্রো লিমিটেড একটি। এ প্রতিষ্ঠানটি অনুখাদ্য ও বালাইনাশকের পণ্য রয়েছে ৩৯টি। প্রতিষ্ঠানটি মূলত ভারত ও চীন থেকে অনুখাদ্য এবং বালাইনাশক এনে রিপ্যাকিং করে বাজারজাত করেন। বন্দরে একবার এসব যাচাই হলেও বাজারজাত পর্যন্ত আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। জেলার সব কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চলছে এভাবেই । অনেক প্রতিষ্ঠান আবার আমদানীকৃত পণ্যের সাথে ভেজাল দিচ্ছেন হর হামেশাই। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধানরা চান মান নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা রাখা দরকার। সাথে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

বগুড়া শাজাহানপুরের টেনস এগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহেদী হাসান পাঠান বলেন, 'মার্কেট মনিটরিং যদি নিয়মিতভাবে জোদোর করা হয়, তাহলে কৃষক বালাইনাশকের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা পাবে বলে আশা করি।'

বগুড়ার জাজ এগ্রোর চেয়ারম্যান জহর আলী বলেন, 'আমরা যারা ব্যবসা করি, তারা মান নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবসা করছি কি না তার জন্য এখানে পরীক্ষাগার থাকা উচিত। পরীক্ষাগার থাকলে মানুষের সচেতনতা বেড়ে যাবে।'

কৃষক ব্যবহারবিধি সঠিকভাবে মেনে না চলা এবং ভেজাল সার এবং কীটনাশকে মাটির দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির কারণ হিসেবে দেখছেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। আর কৃষি উপকরণের মান নিয়ন্ত্রণে বগুড়ায় একটি ল্যাব স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার তাগিদ দিচ্ছেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, 'অতিরিক্ত ওষুধ ব্যবহারের ফলে মাটিতে একটা বন্ধ্যাত্য সৃষ্টি হয়, এছাড়াও ধীরে ধীরে এখঅনের যে মেটালগুলো থাকে তা ফসলের মাধ্যমে মানবদেহে গিয়ে নানা ধরনের অসুখের তৈরি হয়।'

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপপরিচালক নাজমুল হক মন্ডল বলেন, 'আমরা এখানে একটা ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে বিভিন্ন পরীক্ষা করতে পারতার তাহলে পণ্যের ভেজালগুলো আমরা ধরতে পারতাম।'

বগুড়ায় সার এবং সার দ্রব্যের আমদানিকারক, উৎপাদক, বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৮০টি এবং বালাইনাশক বিদেশ থেকে আমদানি করে রিপ্যাকিং করছেন এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০টি।

এসএস