সুস্বাদু ইলিশের চাহিদা ভারতে আকাশছোঁয়া, কিন্তু বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহের জন্য নিকটতম প্রতিবেশি বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল দেশটি। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে শুধু ভারতকে বাংলাদেশ কিছু ইলিশ দিলেও রপ্তানি সীমিত। ২০২২ সালে ভারতে দুই হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানি করে ঢাকা। বলা বাহুল্য, দেড়শ' কোটি মানুষের দেশের জন্য এ সংখ্যা একেবারেই নগণ্য।
ইলিশের স্বাদ নিতে ভারতবাসীর অধীর অপেক্ষার অবসান ঘটাতে চান ভারতের মৎস্যবিদরা। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী, বাঙালি পশ্চিমবঙ্গের পুকুরে ইলিশ চাষের উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে রাজ্যজুড়ে।
আইসিএআর-সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট- সিফরি'র তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে আবদ্ধ জলে ইলিশ মাছের চাষ। মৎস্যবিজ্ঞানীদের দাবি, দীর্ঘদিনের গবেষণায় ইলিশ মাছ উৎপাদনের সঠিক সমীকরণ বের করতে পেরেছেন তারা।
মাছে ভাতে বাঙালির পাতে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদগুলো নিঃসন্দেহে ইলিশের দখলে। ইলিশের নাম, গন্ধ ও স্বাদ ভোজনরসিক বাঙালির বড় দুর্বলতা। তবে এতোদিন পর্যন্ত মাছের রাজার জন্য নদী আর সমুদ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো। দিন দিন নদী ও সমুদ্রে ইলিশের পরিমাণ কমছে বলে পুকুরে ইলিশ চাষে খুলছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার, বলছেন পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যবিজ্ঞানীরা। শুধু তাই নয়, হাতের কাছে আবদ্ধ পুকুরে ইলিশের জন্য বর্ষাকাল পর্যন্ত অপেক্ষারও অবসান ঘটছে, কারণ সব ঋতুতেই নাকি মিলবে চাষের ইলিশ।
রাজ্যের তিন জায়গায় পরীক্ষামূলক ইলিশ চাষে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে জু প্ল্যাংকটন। নদী থেকে জাটকা ইলিশ নিয়ে এসে পুকুরে প্রতিপালন করা হচ্ছে, একইসঙ্গে ইলিশের প্রজনন ঘটিয়ে উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার লক্ষ্যেও নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ।
পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রীয় মৎস্য গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, অনেক ধীরে বড় হয় বলে নদী বা সমুদ্রে প্রাকৃতিকভাবে ইলিশ চাষ সময়সাপেক্ষ। সে তুলনায় পুকুরে চাষকৃত ইলিশের ওজন কিছুটা বেশি, তিন বছরে একেকটি পুকুরের ইলিশের ওজন ৭শ' গ্রাম পর্যন্ত। একে ইলিশ নিয়ে গবেষণায় মাইলফলক বলছেন গবেষকরা।