দেশে এখন
0

আজ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। গত সাড়ে সাত দশকের পথচলায় দেশের ক্ষমতায় ছিলো ২৪ বছর। আর টানা চার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা, দলটির বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নতির লক্ষ্যে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্জন করা স্বাধীন দেশটির স্বপ্ন এখন অর্থনৈতিক মুক্তির, যার বর্তমান হাল এই দলটিরই হাতে।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর আশাহত হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের জনগণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অর্থনীতি ও রাজনীতির নানা সূচকে বৈষম্যের শিকার হয় বাঙালিরা।

বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অবহেলিত নেতারা ১৯৪৯ সালে ঢাকার টিকাটুলিতে কে.এম. দাস লেনের ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে এক সভা ডাকেন। আত্মপ্রকাশ করে এক নতুন রাজনৈতিক দল, 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'।

নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সভাপতি হোন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী আর সাধারণ সম্পাদক হোন শামসুল হক। শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারে বন্দি থাকলেও তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়।

ক্রমেই এই অঞ্চলের জনমানুষকে সম্পৃক্ত করতে থাকে নতুন এই রাজনৈতিক দল। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির মাধ্যমে কৃষকের জমির অধিকার ফিরিয়ে দিতে ভূমিকা রাখে দলটি। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতারাও।

নিপীড়িত জনগণের অধিকার আদায়ে তখনকার পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয় আওয়ামী মুসলিম লীগসহ পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দলগুলো। ১৯৫৩ সালে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট।

যুক্তফ্রন্ট ২১ দফার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। ঐ ইশতেহারের প্রধান দাবি ছিল লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন।

পাকিস্তান জন্মের পর ১৯৫৪ সালে প্রথম আইনসভা নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টি আসন পায় নির্বাচনকালীন এই জোট। যেখানে আওয়ামী মুসলিম লীগ পায় ১৪৩টি আসন।

যদিও অল্প কয়েকদিনের মধ্যে যুক্তফ্রন্টের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয় পাকিস্তানি শাসকেরা। কিন্তু বাংলায় জনপ্রিয়তা বেড়ে যায় আওয়ামী মুসলিম লীগের।

১৯৫৫ সালের দলীয় কাউন্সিলে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হলে অমুসলিমরাও যোগদানের সুযোগ পান আওয়ামী লীগে। তবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে মত-পার্থক্যের কারণে ১৯৫৭ সালে দল থেকে বেরিয়ে যান মাওলানা ভাসানী।

এদিকে ১৯৫২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক ও গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক শামসুল হক অসুস্থ হয়ে পড়লে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শেখ মুজিবুর রহমান। আর ১৯৬৬ সালে প্রথম তিনি নির্বাচিত হোন আওয়ামী লীগের সভাপতি।

এরপর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই হয় ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তীতে স্বাধিকার আদায়ের চূড়ান্ত মুক্তিযুদ্ধ- উদিত হয় নতুন একটি দেশ-বাংলাদেশ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, 'মানুষের চাওয়া-পাওয়া কিংবা তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা ছিলো না। সেই ভাবনার জায়গাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৈরি করেছেন। মানুষকে তিনি উদ্দীপ্ত ও সংগঠিত করেছেন।'

স্বাধীনতার পর দেশ পরিচালনার ৪ বছরের মাথায় ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। পরে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হোন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ একুশ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালের ক্ষমতায় ফিরে আসে আওয়ামী লীগ। এরপরে এক মেয়াদের বিরতির পর ২০০৮ সাল থেকে টানা দেশকে পরিচালনা করছে স্বাধীনতার নেতৃত্ব দেয়া দলটি।

এ সময়ে বেড়েছে মাথাপিছু আয়, অর্থনীতির আকার, ঘরে ঘরে পোঁছেছে বিদ্যুৎ, নারীর কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকে ঘুরে ঘটেছে রুপান্তর। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পারমাণবিক বিদ্যুতসহ হাজার হাজার প্রকল্প উন্নয়নের অগ্রযাত্রাায় এগিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশকে।

বাহাউদ্দিন নাছিম আরও বলেন, 'বিশ্বের সঙ্গে আমরা সমান তালে এগিয়ে যেতে চাই। চিন্তা-চেতনা ও দায়িত্ব বোধের জায়গা থেকে দেশের প্রতিটি নাগরিককে আমরা সচেতন করে তুলতে চাই।'

পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন ৭৫তম বছরে। দীর্ঘ পথ চলায় জনগণই দলটির শক্তি, এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।