পরিবেশ ও জলবায়ু , উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

এক দশকের সবচেয়ে তীব্র দাবদাহের কবলে যুক্তরাষ্ট্র

এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র দাবদাহের কবলে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশের বড় অংশে তাপমাত্রা সতর্কতার আওতায় সাড়ে সাত কোটির বেশি মানুষ। টানা পাঁচদিন এসব অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ থাকতে পারে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। সোমবার থেকে একই পরিস্থিতি প্রতিবেশি কানাডাতেও। সতর্কতা জারি রয়েছে অন্টারিও-কুইবেকসহ দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলজুড়ে। উত্তাপ বাড়ছে সুদূর ইউরোপেও।

সমুদ্র সৈকত, সুইমিংপুল আর আইসক্রিমের দোকানে ভিড়ই বলে দেয়, প্রচণ্ড গরমে একটু স্বস্তির জন্য হাসফাঁস করছে মানুষ। প্রাণিকূলের অন্য সদস্যদের জন্যও পরিস্থিতি অনুকূলে নেই। তাপপ্রবাহ যতো পূর্বে সরছে, ততোই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রের মিড-আটলান্টিক ও নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চল। অতিরিক্ত আর্দ্রতায় আরও অসহনীয় রূপ নিয়েছে গরম।

স্থানীয়রা বলেন, অসহ্য গরম পড়েছে। সানস্ক্রিন পছন্দ করি না, তাও এবার দিতে হচ্ছে। রোদে পুড়ে যেতে আরাম লাগে না। দৈনন্দিন জীবনে কিছু ছোট পরিবর্তন আনতে হচ্ছে এমন গরমে। বাইরে কাজ কমিয়ে দিয়েছি, ভেতরে বেশি থাকছি। আগে পার্ক বা লেকের ধারে হাঁটতাম, এখন কমিউনিটি সেন্টারে হাঁটছি। নিজেদের সঙ্গে পোষা প্রাণীরাও যেন পানিশূন্যতায় না ভোগে, সে চেষ্টা করছি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে গেলো বছর। ১৯৩৬ সালের পর, অর্থাৎ ৮৭ বছরে প্রথমবার অস্বাভাবিক গরম দু'টি দিন দেশটি পার করেছে ২০২৩ সালেই। একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির শঙ্কায় সাড়ে সাত কোটির বেশি মানুষকে সতর্ক করেছে প্রশাসন। বলা হচ্ছে, পূর্বাঞ্চলের বড় অংশের ওপর অবস্থান করছে একটি বিশাল ও তীব্র 'হিট ডোম'। এর প্রভাবে আগামী সাতদিন হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত উষ্ণতম সপ্তাহ এবং গ্রীষ্মের শুরু। এ সময়ে আবহাওয়া সংক্রান্ত শতাধিক রেকর্ড ভাঙতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, 'মৌসুমের প্রথম দাবদাহ শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা প্রস্তুত। আগামী কয়েকদিনের পূর্বাভাসে উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার কথা বলা হয়েছে। মঙ্গল ও বুধবারই তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছাবে বলে ধারণা করছি। বৃহস্পতি ও শুক্রবার তাপমাত্রার সূচক ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটে পৌঁছাতে পারে।'

মধ্যপশ্চিম আর উত্তরপূর্বে ১৮টি মার্কিন অঙ্গরাজ্যের বড় অংশই আবহাওয়া বিভাগের নজরে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপমাত্রা সবচেয়ে বিপদজনক ছিল অ্যারিজোনার ফিনিক্সে, যেখানে গেলো বছরই গরমজনিত অসুস্থতায় প্রাণ যায় রেকর্ড ৬৪৫ জনের। তিনদিন আগেই, শনিবার ফিনিক্সে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে।

সোমবার প্রতিবেশি নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির কম এবং কলোরাডোর দক্ষিণে ৩৮ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই ছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণে বিশাল দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। হিট ডোমের প্রভাবে মঙ্গলবার থেকে রোববার পর্যন্ত টানা ছয়দিন দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গরম কমার সম্ভাবনা দেখছে না আবহাওয়া বিভাগ।

পরিস্থিতি সুখকর নয় প্রতিবেশি কানাডাতেও। দেশের দক্ষিণপূর্বে নিউ ব্রুন্সউইক, অন্টারিও'র পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চল, কুইবেকের দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলেও চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁতে পারে। টরোন্টোতে এরইমধ্যে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে প্রশাসন।

ভোক্তোভুগীরা বলেন, কথা বলা শেষ করেই আমরাআ কোনো পুলে ঝাঁপিয়ে পড়বো। এতোক্ষণ দৌড়েছি, এখন ঠাণ্ডা হতে হবে। গরমে বাইরে থাকার চেষ্টা করলে পরে শরীর শীতলও করতে হচ্ছে। শুনেছিলাম যে কানাডা খুব ঠাণ্ডা দেশ। কিন্তু এখন সেটা সত্যি মনে হচ্ছে না। ভারতের হিমাচল থেকে ফেব্রুয়ারিতে যখন এদেশে আসি, তখনই ঠাণ্ডা পাইনি।

গ্রীষ্মের আগেই নজিরবিহীন গরমে পুড়ছে ইউরোপের দেশ গ্রিসও। তীব্র গরমে এ পর্যন্ত চার বিদেশি পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। অ্যাক্রোপলিসসহ শীর্ষ বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র এবং অসংখ্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। উত্তর আফ্রিকা থেকে ধেয়ে আসা বাতাসে চলতি সপ্তাহজুড়ে গ্রিস উত্তপ্ত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।