পবিত্র কাবা ঘিরে হাজিদের ঢল। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) কাবা তাওয়াফ সেরে মধ্যরাত থেকে শুরু হয় মিনায় পৌঁছানোর তোড়জোড়।
ধর্মীয় রীতি মেনে ইহরাম পরে যাত্রা শুরু করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা; শুক্রবার ভোর থেকে দল বেঁধে পৌঁছাতে থাকেন তাঁবুর শহরে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ বার্ষিক মিলনমেলা পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আরবি জিলহজ মাসের ৭ ও ৮ তারিখ আট কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে মিনায় পৌঁছে রাতভর ইবাদতে ব্যস্ত থাকবেন হজপ্রত্যাশীরা।
তাদের একজন বলেন, 'আমি খুব খুশি। ছেলে, মেয়ে, ছেলের বৌয়ের দিনরাত যত্নে অনেকটা ভালো বোধ করছি। তিনদিন ধরে এখানে আছি, দিনভর ইবাদত করছি, কোরআন পড়ছি।'
মিনার শান্ত উপত্যকায় এ বছর ২৫ লাখ হজযাত্রীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রায় একমাস ধরে মক্কায় জড়ো হয়েছেন চলতি বছরের হজপ্রত্যাশীরা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৮০টি দেশ থেকে ১৫ লাখের বেশি মুসলিম সৌদি আরবে পৌঁছেছেন; যোগ দেয়ার কথা রয়েছে কয়েক লাখ স্থানীয় সৌদির।
অপর এক হজযাত্রী বলেন,'পাকিস্তান থেকে আল্লাহর ঘরে এসেছি হজ করতে। প্রথমবার হজ করছি। ৭৫ বছর বয়সী আমার মা, বোন আর স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি।'
৯ জিলহজ শনিবার ভোরে সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফা'র উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন মুসল্লিরা। এদিন, 'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক' ধ্বনিতে প্রকম্পিত হবে আরাফা'র ময়দান। মসজিদে নামিরা থেকে সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে হজের খুতবা শুনবেন সারা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম। নামিরায় জোহর ও আসরের নামাজও আদায় করবেন তারা।
আরাফায় পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষে আরাফাত থেকে মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে রাত কাটাবেন সেখানেই, খোলা আকাশের নিচে। এসময় ইবাদতের পাশাপাশি পাথর সংগ্রহ করবেন মুসল্লিরা, যা মিনায় ফিরে পরের তিনদিনে শয়তানের প্রতীক জামারা লক্ষ্য করে ছুঁড়বেন।
এর মধ্যে ১০ জিলহজ, রোববার পবিত্র ঈদুল আজহায় আত্মত্যাগের নিদর্শন হিসেবে পশু কোরবানিতে অংশ নেবেন হাজিরা, একই সঙ্গে আত্মশুদ্ধির নিদর্শন হিসেবে মাথা মুণ্ডন করবেন এবং ইহরাম খুলে ফেলবেন।
মঙ্গলবার মক্কায় ফিরে সাতবার কাবা তাওয়াফ করে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখান থেকে হেঁটে যাবেন হাজিরা। এর মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের পাঁচ দিনের আনুষ্ঠানিকতা।
এ বছর তীব্র গরমের মধ্যে হজ পালন করতে হচ্ছে মুসল্লিদের। শুক্রবারই মক্কা-মদিনায় তাপমাত্রার পারদ ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া বিভাগ। গরমে হজ পালন সহজ করতে মক্কার মসজিদ আল-হারাম এবং সংলগ্ন সব তাঁবুতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হজের প্রায় পুরো পথজুড়ে তাপ-প্রতিরোধী আবরণ দেয়া, পানি ছিটানো, ভ্রাম্যমাণ পানি কেন্দ্র বসানোসহ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি প্রশাসন।