হজ শেষে চলছে দেশে ফেরার প্রস্তুতি। চলতি সপ্তাহে শেষ হওয়া হজে অংশ নেন দেশ-বিদেশের প্রায় ২০ লাখ মুসলিম। আরবি বর্ষপঞ্জিতে চলতি বছরও হজের সময় পড়েছে সেদ্ধ হওয়া গরমের মধ্যে। ফলে তীব্র গরম প্রাণঘাতী হয়ে উঠলো হাজারো মানুষের জন্য। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়, মিনায় যাওয়া-আসার পথে রাস্তার ওপরেই ইহরামে ঢাকা হাজিদের মরদেহ পড়ে ছিল।
হজের সময়ে মক্কায় তাপমাত্রা ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছানোর মধ্যেই প্রাণ গেছে প্রায় ১০টি দেশের কমপক্ষে এক হাজার ৮১ হজ প্রত্যাশীর। বন্ধু ও স্বজনরা নিখোঁজ হাজিদের সন্ধান পেতে হাসপাতালে ভিড় করছেন, অনলাইনে সাহায্য চেয়ে পোস্ট করছেন। সৌদি প্রশাসন বলছে, গরমে অসুস্থ হয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মানুষ নিবন্ধন করে হজে অংশ নেননি। ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিশ্রাম নিয়ে শরীর শীতল করাসহ গরমজনিত অসুস্থতার ঝুঁকি এড়াতে ১৮ লাখ মানুষের জন্য হজ কর্তৃপক্ষের নানা ব্যবস্থার কোনো সেবাই নিতে পারেননি অনিবন্ধিতরা।
গরমে অসুস্থ হাজিদের মধ্যে প্রাণ হারানো ৬৫৮ জনই মিশরের নাগরিক। এদের মধ্যে ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বৃহস্পতিবার। এছাড়া এদিন মৃত্যু হয়েছে পাকিস্তান আর ইন্দোনেশিয়ার কয়েকজন হাজিরও। এক আরব কূটনীতিকের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, মিশরের এই নাগরিকদের মধ্যে ৬৩০ জনই ছিলেন অনিবন্ধিত হাজি। গরমে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়াসহ নানারকম উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা।
সম্প্রতি এক সৌদি গবেষণায় বেরিয়ে আসে, মক্কায় প্রতি ১০ বছরে তাপমাত্রা বাড়ছে ০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে।
ক্লাইমেট অ্যানালিটিক্সের জলবায়ু বিজ্ঞানী ফাহাদ সাঈদ বলেন, 'আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে, যতোটা সম্ভব খাপ খাওয়ানো শিখতে হবে। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে যদি ধর্মীয় রীতি পালনে কিছু সমঝোতা করতেও হয়, করতে হবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে আটকে রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে প্রতি বছর হাজিদের জীবন হুমকিতে পড়বে।'
হজে যাওয়া ব্যয়বহুল বলে প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলিম অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে হজে অংশ নেয়ার চেষ্টা করেন। চলতি মাসে সৌদি কর্তৃপক্ষ অনিবন্ধিত কয়েক লাখ মুসলিমকে মক্কা থেকে সরানোর উদ্যোগ নিলেও গেলো সপ্তাহে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতায় অনেকেই যোগ দিয়েছেন প্রশাসনের নজর এড়িয়ে।
তিনি আরও বলেন, 'মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি অনেক প্রবল। অনেকের জন্যই জীবনে হজের সুযোগ একবার আসে বলে যেকোনোভাবে তারা এতে অংশ নিতে চান। পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক মুসলিম বাড়ি না বানিয়ে হজের জন্য অর্থ সঞ্চয় করেন। গরমে হোক বা শীতে, হজের সময় তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোনোভাবে একটা সুযোগ পেলেই হজে যেতে চান তারা।'
হজের সময় উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে দেহকে অভ্যস্ত করতে না পারা, হঠাৎ ভীষণ শারীরিক পরিশ্রম, বেশি সময় রোদে থাকা এবং তুলনামূলক প্রবীণ জনগোষ্ঠীর হজে অংশ নেয়াসহ নানা কারণে হজের সময়ে বাড়ছে মৃত্যু।
আরবি বর্ষপঞ্জি অনুসারে প্রতি বছর হজের সময় ১১ দিন করে এগিয়ে আসে বলে আগামী বছর হজ অনুষ্ঠিত হবে জুন মাসের শুরুতে। ফলে ২০২৫ সালে হাজিদের জন্য আবহাওয়া কিছুটা স্বস্তির হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।