একদিকে অতিরিক্ত বিমানভাড়া অন্যদিকে সিন্ডিকেট। সবমিলে নাগালের বাইরে ইসলামের ফরজ ইবাদত হজ। ২০২২ সাল পর্যন্ত সংকট না হলেও গেলো দুবছর দফায় দফায় সময় বাড়িয়েও পূরণ করা যায়নি কোটা। কিন্তু কেন?
আল নাফি ট্রাভেল স্বত্বাধিকারী মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘তসলিমের দোসর ও এদের সাথে যারা জড়িত ছিল তারা টিকেটের সিন্ডিকেট অংশগ্রহণকারী।’
এম এ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের এমডি মাওলানা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘১ লাখ ২৮ হাজার টাকা যেখানে বিমান ভাড়া ছিল সেখানে তিনি বিমান ভাড়াকে ১ লাখ ৯০ হাজারে নিয়ে গিয়েছে। তার মানে পার্সেন্টেজের জন্য তিনি ইচ্ছাকৃতবাবে এইটা করেছে।’
বিপত্তির শুরু ২০২৩ সালে। সে বছর ধর্ম মন্ত্রণালয় আগের বছরের চেয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে। ১ বছরের ব্যবধানে অস্বাভাবিক রকম খরচ বাড়ায় আগ্রহ হারান মুসল্লিরা।
২০২৪ সালে আর নাজুক ছিল পরিস্থিতি। চলতি বছর পাঁচ দফা সময় বাড়ানোর পরও বাকি ছিল কোটার ৪৪ হাজার। যদিও আগের বছরের চেয়ে এ বছর হজের প্যাকেজের দাম কমানো হয়েছিল ৯২ হাজার টাকা। তবুও হাতের নাগালে আসেনি খরচ।
তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হজ নিয়ে ফের জেগেছে আশা। সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে তসলিমের হাব কমিটি বাতিল করেছে সরকার। এজেন্সিগুলোর আশা এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমবে হজের খরচ। সহজ হবে হজযাত্রা।
আন্তরিক ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল স্বত্বাধিকারী মেসবাহ উদ্দিন বলেন, আগে ৫ লাখ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা ছিল সেখান থেকে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টিকিটে কমালে আর যদি অন্যদিক থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার কমিয়ে ৫ লাখের মধ্যে আনতে পারলে হাজীরা খুশি থাকবে।’
কেমন হবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম হজ প্যাকেজ? কত কমতে পারে খরচ? বিভিন্ন সূত্র বলছে, এবার দুটো প্যাকেজ ঘোষণা করবে ধর্ম মন্ত্রণালয়। প্রথম প্যাকেজটি হবে কাবা শরীফের ১ থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে। আর দ্বিতীয়টি হবে আড়াই থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে।
খরচ কমার তালিকায় সবার আগে রয়েছে বিমান ভাড়া। গেল বছর টিকিটের দাম ১ লাখ ৯৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও এবার বিমান কর্তৃপক্ষই প্রস্তাব দিয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার।
তবে এতেও খুশি নয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, আরও হাজার দশেক টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকার কোটায় নামতে পারে বিমান ভাড়া।
এছাড়াও বাড়ি ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, এনবিআরের ভ্যাট ট্যাক্স, বেবিচকের বিভিন্ন ফিও কমছে। সবমিলে গেলোবারের তুলনায় প্রথম প্যাকেজে ৪০ হাজার আর দ্বিতীয় প্যাকেজে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত কমতে পারে।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন বলছেন, এবারের হজের প্যাকেজ যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে সরকার। সহযোগিতাও মিলেছে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিমানের সাথে আমাদের মিটিং হয়েছে। এনবিআরের সাথে মিটিং হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাথেও আমাদের আলাপ আলোচনা চলছে। আলোচনা হয়েছে কোথায় খরচ কমানো যায় সেখান থেকে বাংলাদেশ বিমান বলেছে টিকেটের ভাড়া কমাবে। এছাড়া এনবিআরের চার্জও নিবে না তারা। হজের যৌক্তিক একটা প্যাকেজ করার জন্য আমরা অত্যন্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’
এবার দেখার বিষয় হজের উপর কতটা আস্থা ফেরাতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার।