দেশের প্রযুক্তিগত দুর্বলতায় লাখো নাগরিকের তথ্য ফাঁসের মত ঘটনা ঘটে গত বছরের জুলাইয়ে। কিছুদিন পর পর সফটওয়্যার ও ওয়েবসাইটের দুর্বলতা সংবাদ শঙ্কিত করে তুলে দেশের মানুষদের।
অন্যদিকে দেশে বসে অ্যাপ কিংবা সফটওয়্যার বানিয়ে বিদেশে সেবা দিচ্ছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ ঘরে বসে কাজ করছেন বিদেশি সফটওয়্যার কোম্পানিতে। বিদেশের নানা সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তিগত সব সেবা দিচ্ছে ছোট বড় নানা কোম্পানি। এতে যেমন মিলছে বড় অংকের অর্থ তেমনি তাদের কর্মদক্ষতায় খুশি সেবা গ্রহীতারা । তবে দেশের বাজারে এখনো কেন বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি তারা ?
অ্যাপ নির্মাতা জুবায়ের হোসেন বলেন, 'বার বারই প্রশ্নবিদ্ধ হয় সরকারি ওয়েবসাইট বা অ্যাপগুলোর প্রজেক্টের কাজগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে মুনাফা লোভী যারা আছে তারা টেকনোলজির দিকে না তাকিয়ে শুধুমাত্র মুনাফার দিকে তাকিয়ে এই কাজগুলো করে থাকে। তাদের উচিত আরও সচেতন ও সর্তক থাকা।'
যেখানে প্রতিবেশি দেশ ভারত ১২ বছর আগেই সফটওয়্যার খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছে, সেখানে দেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি এখনো বিদেশি সফটওয়্যারের উপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। একই ধরনের সফটওয়্যার দেশে থাকা সত্ত্বেও অনেকেই তা কিনছেন বিদেশ থেকে। এর কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা।
উইজার্ড সফটওয়্যার এন্ড টেকনোলজি বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যাবস্থপনা পরিচালক বে-নজীর আহাম্মেদ ববে-নজীর আহাম্মেদ বলেন, 'আমাদের ডেটাগুলো সিকিউরড না। আমরা যখন বিদেশিদের কাছ থেকে সফটওয়্যারগুলো নিচ্ছি তখন সকল ডেটা তাদের কাছে চলে যাচ্ছে ফলে এইটা একটা ভয়ংকর বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।'
প্রযুক্তি খাতের সেবার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ বিলিয়ন ডলার। তবে প্রতিবছর ৫০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ দেশের বাইরে চলে যায় বিভিন্ন সফটওয়্যারের ল্যাইসেন্স ও মাসিক সাবস্ক্রিপশন কিনতেই। সেইসঙ্গে দেশের অনেক তথ্য চলে যাচ্ছে বিদেশি কোম্পানির হাতে।
১৯৯৭ এর পর থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলা সফটওয়্যার খাত এখনো অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। বাধা কাটি উঠে এই খাত হয়ে উঠবে পোশাক শিল্পের মত রপ্তানির আরেকটি বড় খাত।
এই সেক্টরগুলোতে এখনো বিদেশিদের দখল আছে। তাদের সফটওয়্যারগুলো গ্রাহকের কাছে চাহিদা বেশি কারণ আমরা এখনো আমাদের সফটওয়্যারগুলো পপুলার করতে পারিনি। এর কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিনিয়োগ নেই।
বছরে সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণ নেয় প্রায় ৩০ হাজারের বেশি তরুণ। সেখান থেকে কেউ কেউ ফ্রিল্যান্সিং করে হচ্ছেন আত্মনির্ভরশীল। বেসিসের তথ্য মতে প্রযুক্তির সেবা খাতে ৫ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ১০০০ কোটি টাকার মুনাফা করে।
ক্রিয়েটিভ আইটির ওয়েব ও সফটওয়্যারের বিভাগীয় প্রধান মো. শোহান হোসেন বলেন, 'এখন যারা শিখতে আসে তারা কিন্তু টার্গেট নিয়ে আসে যে আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করবো এবং ভালো করবো। আমরা প্রায় ৭০ হাজারের বেশি স্টুডেন্টদের আইটি সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে তাদের হেল্প করেছি। এর মধ্যে ২০ হাজারের বেশি স্টুডেন্ট আছে যারা বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত আছে। '
বিদেশি প্রযুক্তি থেকে সরে এসে বাড়াতে হবে দেশীয় প্রযুক্তির ব্যবহার। এতে কমবে খরচ, দেশের অর্থ থাকবে দেশেই। চাঙ্গা হবে দেশের অর্থনীতি এমনটাই আশা বিশ্লেষকদের।