অর্থনীতি
বাজেট ২০২৪-২৫

এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দায়িত্ব নিতে হবে সংসদকে

এবারও ঘাটতি বাজেট পূরণে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার টার্গেট চেপেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাঁধে। খেলাপি ঋণ আর তারল্য ঘাটতিতে দুর্বল ব্যাংক। বাজেটের আগে আর্থিক খাতের এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও ব্যাংক খাতের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিতে হবে সংসদকে। কর কৌশলে ন্যায্যতা সৃষ্টির সাথে নিশ্চিত করতে হবে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সুশাসন।

বেশ কয়েকবারই অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতার দায় নিয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জানান টার্গেটের পেছনে ছুটতে গিয়ে হয়রান এনবিআর। তবে দেখো হয় না পূর্ববর্তী বছরের কর সংগ্রহের সক্ষমতা।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারিতে সংশোধন করে তা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। নতুন অর্থবছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার টার্গেট চাপতে যাচ্ছে এনবিআরের কাঁধে।

তবে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ মনে করেন, এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের খাত সৃষ্টি করে দিতে হবে সংসদ থেকে।

তিনি বলেন, 'কথা বলতে হবে সংসদের সাথে। যে আপনি আমার ওপর যে কর বসাবেন সেই কর বাস্তবায়নের মতো পরিস্থিতি, পথ,পন্থা করে তারপর আমাকে বাজেট দেন। আপনি গোপন রেখে বাজেটে আমার ওপর শুধু কর চাপালেন সেটা তো বাস্তবায়ন হবে না। সেজন্য সংসদের কাছে অনুরোধ, আপনাদের যে সংসদীয় কমিটি আছে. যার যার সাথে আলোচনা করা যায় সেই আলোচনা করে আপনারাই ঠিক করেন। তারপর এমন টার্গেট দেন এনবিআরকে যেন সেটা পূরণ করতে বাধ্য হয়।'

এনবিআর এর রাজস্বের ৮০ শতাংশই ব্যয় হয় বেতন-ভাতা, ঋণের সুদ, পেনশন পরিশোধে। এছাড়া বাজেট ঘাটতি পূরণে নির্ভরতা দেশিয় আরেক উৎস ব্যাংক ও আর্থিক খাত। এবার ঋণপত্র ছাড়াও বন্ড ছেড়ে বিভিন্ন প্রকল্প ও ব্যয় খরচ মেটানোর সিদ্ধান্তের কথা শোনা যাচ্ছে। তবে আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচারের কারণে ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতিতে সরকারকে সহায়তার সক্ষমতা নেই বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, 'অর্থনীতি যদি মেরামত না হয়, যে অবস্থায় আছে সেগুলো একেবারে গোল্লায় চলে যাচ্ছে। এগুলো তো এনবিআর ঠিক করতে পারবে না। সুতরাং সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণের পক্ষ থেকে আয় এবং ব্যয়ের বাজেট আসতে হবে।'

সম্প্রতি জাতীয় অর্থনীতি সমিতি জানায়, ১৯৭২-৭৩ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত পুঞ্জীভূত অর্থপাচারের পরিমাণ আনুমানিক ১১ লাখ কোটি টাকার বেশি। বেশিরভাগই আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে। তবে পাচার হওয়া অর্থ বা কালোটাকা নিঃশর্তে ফেরত আনা অনৈতিক বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, খেলাপিঋণ ও অর্থপাচার বন্ধে সংসদকেই আর্থিক খাত পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব নিতে হবে।

তিনি বলেন, 'বছরে আমাদের দেশ থেকে কমপক্ষে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হচ্ছে। অর্থ পাচারকে মোটামুটি মধ্যম পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি সেটা বছরে সেফ করতে পারি। আমাদের যে সমস্যা আছে সেগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব, সেটা করাও আছে কিন্তু স্বীকার করা নেই। কালো টাকাকে বৈধতা দেয়া এবং অর্থপাচারকে আবার ফেরত আনার নামে বৈধতা দেয়া, যেটা গত দুইবার হয়েছিল। সেটি যদি পুনরায় হয় তাহলে বাস্তবে যে কারণ দেখিয়ে এটা করা হয় তার কিছুই পাবো না আমরা।'

এই মুহূর্তে রিজার্ভ ১৫ বিলিয়নের নিচে। সূচকে প্রবৃদ্ধি ও রেমিটেন্স ইতিবাচক হলেও ব্যষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো ইতিবাচক মোড় নিতে হলে আসছে বাজেটে আরও বেশি সতর্কতার সাথে আর্থিক খাত ও নীতিতে নির্মোহ সংস্কারের পরামর্শ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর