দেশে এখন

ঘূর্ণিঝড় রিমাল: মোংলা-পায়রায় ১০, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত

প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মোংলা ও পায়রা বন্দরে ৭ নম্বর সর্তক সংকেতের পরিবর্তে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার বন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ সতর্কতা বিজ্ঞপ্তিতে আজ (রোববার, ২৬ মে) সকালে এই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের যে গতিপথ দেখানো হচ্ছে তা পশ্চিমবঙ্গের সাগর আইল্যান্ড ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝ দিয়ে অতিক্রম করবে।

ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে পূর্বাভাসে।

এদিকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুপুর ১২টা-রাত ৮টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামাসহ সবধরনের কার্যক্রম বন্ধ করেছে কতৃপক্ষ। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে কক্সবাজার বিমানবন্দরে সকাল থেকে সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ রয়েছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে কলকাতা থেকে ৩৯৪টি ফ্লাইট চলাচল ২১ ঘণ্টার জন্য স্থগিত রেখেছে কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে ৯টি জেলা। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালী। আর  ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকা ৭ জেলা হলো চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও চাঁদপুর।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উত্তাল সাগর, ছবি : এখন টিভি

সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মুহিব্বুর রহমান মুহিব বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল ১০ কিলোমিটার বেগে এগিয়ে আসছে। আজ রাতে এটি আঘাত হানবে। দুর্যোগ প্রস্তুতি হিসেবে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ ৪ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে।

সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবিলায় খাদ্য গুদামগুলোতে খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু পৌঁছে দেয়া হয়েছে।'

পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমি ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেজন্য ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

আজ দুপুর ১২টার পর থেকে উপকূলে অগ্রভাগের প্রভাব পড়া শুরু হবে। রাত ১২টায় পুরো উপকূলজুড়ে প্রভাব থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।

তিনি বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় রিমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উপকূল অতিক্রমের সময় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যাবে। বিকাল ৩ টার আগে উপকূলের সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এছাড়া ঢাকায় আজ বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টিপাত হবে এবং আগামীকাল সবখানেই বৃষ্টি হবে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব। ছবি: এখন টিভি

আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ব্যাসার্ধ ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকবে। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা হবে ৩ মিটার, ৮ থেকে ১০ ফিট। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় নদীগুলো প্লাবিত হবে, ভূমিতে জোয়ারের লবনাক্ত পানি চলে আসবে।

চট্টগ্রাম বন্দরে এলার্ট ৪ জারি করা হয়েছে। সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে বন্দর কতৃপক্ষ। পণ্যবাহী জাহাজকে গভীর সাগরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

এদিকে বৈরি আবহাওয়ার কারণে সব নৌ রুটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ।

এছাড়া সাগরের সকল নৌ-যান কে নিরাপদে তীরে ফিরতে বলা হয়েছে। উপকূলের জনমানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেও বলেছে আবহাওয়া অফিস।

এর আগে ঘূর্ণিঝড় 'রিমালʼ এর প্রভাবে নৌপথ উত্তাল হওয়ায় যাত্রী সাধারণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে শনিবার (২৫ মে) ১০টা থেকে ঢাকা নদী বন্দর হতে অভ্যন্তরীণ সকল লঞ্চের চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত চাঁদপুর নদী বন্দর থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

ঝড়ের কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আজকের কক্সবাজারগামী সকল ফ্লাইট এবং কলকাতাগামী দুটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ৩০০ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সারাদেশেই কম বেশি বৃষ্টিপাত হবে।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর