ব্যাংকপাড়া
অর্থনীতি

অনলাইন ব্যাংকিংয়ে বেসরকারি খাত এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান

৩৫৮ কোটি টাকা দেনা থেকে ২৭ লাখ কোটি টাকার লেনদেনে পৌঁছেছে দেশের ব্যাংকিং খাত। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনলাইন ব্যাংকিং সেবায় বেসরকারি খাতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে গেলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আগায়নি আশানুরূপভাবে। সারাদেশে ১০ হাজার এটিএম বুথের বিপরীতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বুথ সংখ্যা ১ হাজারেরও কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইন সেবায় সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা না করলে গ্রাহক আস্থা হারাবে। সংকট হবে আর্থিক খাতে।

নিরাপদে অর্থ সঞ্চয়ের অন্যতম মাধ্যম ব্যাংক। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশি-বিদেশি ১৮টি ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থার মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতের যাত্রা। পাকিস্তানিদের রেখে যাওয়া ৩৫৮ কোটি টাকা দায় মাথায় নিয়ে শুরু হলেও এখন লেনদেন ২৭ লাখ ৫১ হাজার ১১৮ কোটি টাকার।

টাকা জমা, উত্তোলন, আমানত গচ্ছিত বা ঋণ দেয়া ব্যাংকের কাজ। আর এই লেনদেন সম্পন্ন করতে গ্রাহককে সরাসরি যেতে হতো ব্যাংকের শাখাগুলোতে। তবে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বহুলাংশে। অনলাইন মাধ্যম গ্রাহকদের করেছে সময় ও পরিশ্রমের সাশ্রয়। এই যেমন ইশতিয়াক হোসেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা এই চাকরিজীবীর সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে লেনদেনের সুযোগ নেই। তিনি বেছে নিয়েছেন বেসরকারি ব্যাংকের অনলাইন লেনদেন।

তিনি বলেন, 'অনেক সময় বেঁচে যাচ্ছে। এটিএম বুথে এসেই টাকা জমা দিতে পারছি। আমার মনে হয় সরকারি ব্যাংক থেকে বেসরকারি ব্যাংক এগিয়ে আছে।'

তবে সেখানেই মিলে আরেক চাকরিজীবী মোহাম্মদ আজিম। যার সরকারি ব্যাংকে একাউন্ট থাকলেও তিনি স্বাছন্দ্যবোধ করেন বেসরকারিতে।

তিনি বলেন, 'আমার সরকারি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে। তবে সরকারি ব্যাংকে যে সুযোগ সুবিধা পায় তার থেকে বেসরকারি ব্যাংক ভালো। সরকারি ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গেলেও অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় আমার।'

দেশের অনলাইন লেনদেনে সুবিধা পাওয়াতে বেসরকারি ব্যাংকের অবদান অনেক বেশি। এখাতে দিনে লেনদেন হয় গড়ে ১৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা । একইভাবে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে জানুয়ারিতে ৩৯ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। দেশের ১০ হাজার ১০৯টি শাখার মধ্যে ৮ হাজার ৮৯৯টি ব্যাংক শাখাই অনলাইনের আওতায়। আর এসবের ৯০ শতাংশই বেসরকারি খাতের হাতে।

সোনালী ব্যাংক গ্রাহকদের কাছে অনলাইন সেবা অনেকদূর এগিয়ে নিলেও পিছিয়ে রয়েছে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও আর্থিক খাতগুলো। অ্যাপস স্টোরে ব্যাংকগুলোর গ্রাহক রিভিউ দেখে সেটা আরও স্পষ্ট হয়ে যায়। সারা দেশে যেখানে এটিএম বুথ রয়েছে ১০ হাজার ৩৫৫টি সেখানে রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকের এটিএম সংখ্যা ১ হাজারেরও কম। এসব সংকট কাটিয়ে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চায় ব্যাংকগুলো।

সোনালী ব্যাংক পিএলসি'র প্রধান নির্বাহী মো. আফজাল করিম বলেন, 'আমরা গত ১ থেকে দেড় বছরে অনেক সার্ভিস ডিজিটালাইজ করেছি। আমরা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স সরাসরি তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাপসের মাধ্যমে নিয়ে আসছি।'

গ্রাহক ভোগান্তি কম-বেশি থাকলেও বেসরকারি ব্যাংক বাজার দখল করে রেখেছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। নিত্যনতুন অনলাইন সুবিধাই এসব ব্যাংক গ্রাহকদের নানা বোনাস সুবিধাও দিচ্ছে।

সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল প্রধান মুজতানিবুল আহমেদ বলেন, 'আমরা নিত্যনতুন কি জিনিস আনছি। মানুষ যেন ব্রাঞ্চে না যায়। নিজেই কিছু করতে পারে। সেটা কি কিন্তু সিটি ব্যাংক করেছে। আমরা সেই লক্ষ্যেই আগাচ্ছি। আমাদের অনলাইন গ্রাহক সংখ্যা ৬ লাখের কাছাকাছি। টোটাল সিটি টাচ ব্যবহার করছে ৭০ শতাংশ গ্রাহক। গতবছর আমাদের লেনদেন ছিল ৬৫ হাজার কোটি টাকা।'

ব্যাংকিং খাতের ডিজিটালাইজেশন বাড়ালে গ্রাহকের স্বাচ্ছ্যন্দের পাশাপাশি আর্থিক খাতের সংকট কাটবে বলে মনে করেন সাবেক এই গভর্নর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, 'এখন পাবলিক ব্যাংকগুলোকে বলা উচিত ব্যাংক কিন্তু প্রাইভেট এবং পাবলিক বলে কিছু নেই। ব্যাংক সবার। পাবলিক ব্যাংকগুলোকে প্রাইভেট ব্যাংকের মতো হতে হবে।'

বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং দিনে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হলেও সরকারি ব্যাংকগুলোর তেমন একটা অংশীদারিত্বই নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারি ব্যাংকগুলোকে জনপ্রিয় করতে চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেয়ার কোন বিকল্প নেই ।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর