প্রবাস

সংযুক্ত আরব আমিরাতে সুগন্ধি ব্যবসায় লাখো বাংলাদেশি প্রবাসী

সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিজেদের কারখানায় নামি ব্র্যান্ডের সুগন্ধি পণ্য তৈরি করছেন বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা। যার কোনো কোনোটির বাজারমূল্য লাখ টাকা। লাভজনক এই ব্যবসায় দেশটিতে বিনিয়োগের পাশাপাশি বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান বাড়ছে।

আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সুগন্ধির রয়েছে চমৎকার সেতুবন্ধন। মধ্যপ্রাচ্যে লাভজনক এই ব্যবসায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন বাংলাদেশিরা। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন নামিদামি ব্রান্ডের প্রতি আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। যে কারণে আরব দেশগুলোতে আগর-আতরের সুবাস ছড়াচ্ছে উদ খালিজি ব্র্যান্ড। যা এখন তৈরি হচ্ছে খোদ বাংলাদেশিদের হাতেই। কোথাও পুরনো পদ্ধতিতে আবার কোথাও সুগন্ধি তৈরি হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রে।

দেশটির শারজাহর একটি কারখানায় আগর কাঠের সুগন্ধি তৈরি করেন কয়েকজন বাংলাদেশি। এসব সুগন্ধি ঘরবাড়ি, দোকানপাট, মসজিদ কিংবা খোলা জায়গায় কয়লার সঙ্গে পোড়ালে ধীরে ধীরে মোহনীয় সুবাস ছড়ায়। খুচরা বাজারে যার প্রতি কেজি মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১০ থেকে ৫০ হাজার দিরহাম। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা। আগর কাঠ থেকে এই প্রক্রিয়ায় তৈরি তেলের চাহিদাও ব্যাপক, যা মধ্যপ্রাচ্যে চড়া মূল্যে বিক্রি হয়।

একজন কারিগর বলেন, ‘আরবের লোকরা এটি বেশি পছন্দ করে। ঘরের সুবাস বাড়ানোর জন্য তারা এটা নিয়ে যায়। ভালো দামে এগুলো বিক্রি হয়।'

আমিরাতের কয়েকটি প্রদেশে বাংলাদেশিদের এমন আগর-আতর তৈরির কারখানা রয়েছে। যেখানে যন্ত্রের সাহায্যে অ্যালকোহলের সঙ্গে সুগন্ধির উপাদান মিশ্রণ, উৎপাদন, বোতলজাত ও প্যাকেজিং করা হয়। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী মান ধরে রাখতে এখানকার কারিগররা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিখুঁতভাবে কাজ করেন। এসব প্রতিষ্ঠানে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

কুমিল্লার মাহাবুব আলম মানিক এই খাতের একজন উদ্যোক্তা। আমিরাতে তার কয়েকটি কারখানাসহ ৭টি প্রতিষ্ঠানে অন্তত এক হাজারের মতো বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন। তিনি জানান, কারখানায় প্রস্তুতকৃত সুগন্ধি নিয়ে যাওয়া হয় আলাদা স্টোরে। সেখান থেকেই বাজারজাত প্রক্রিয়া শুরু হয়।

মাহাবুব আলম মানিক বলেন, ‘এই সুগন্ধিটা ভালো করে নিখুঁত প্যাকেজিং করা হয়, যেন কোনো কাঠের গন্ধ না থাকে। আমরা চাই, বাংলাদেশের মানুষ এবং দেশের পণ্য যেন সারাবিশ্বের মানুষ সাদরে গ্রহণ করে।'

আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. আবু জাফর বলছেন, শ্রমিকনির্ভর এই সুগন্ধি খাতে বেশ ভালো ব্যবসা হচ্ছে। এই খাতে যত বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হবে তত বেশি বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘যারা কাজ করছেন তাদের প্রতি যেন মালিকরা সুদৃষ্টি রাখেন। তাদের মজুরি যেন সময়মতো পরিশোধ করা হয়।’

দেশটিতে মোটরযান ব্যবসার পর সুগন্ধি দ্বিতীয় লাভজনক ব্যবসা। এই খাতে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে লাখো প্রবাসী বাংলাদেশির জীবন-জীবিকা জড়িয়ে আছে।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর