পরিবেশ ও জলবায়ু
শিক্ষা

জাবিতে মহাপরিকল্পনা না মেনে 'ইচ্ছেমতো' ভবন, অভিযোগ গাছ কাটার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। যাকে বলা হচ্ছে 'অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প'। কিন্তু এই উন্নয়ন কাজকে অনেকে অভিহিত করছেন খেয়ালখুশির প্রকল্প হিসেবে। অভিযোগ উঠেছে মহাপরিকল্পনা না মেনে ইচ্ছেমতো জায়গায় ভবন তৈরি করা হচ্ছে, কাটা হচ্ছে গাছপালা। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।

সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পদ্মবিল আর বিভিন্ন জীববৈচিত্র্যের সম্মিলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে স্বতন্ত্র রূপ। এখানকার নির্মল পরিবেশ যে কারও হৃদয় শীতল করে।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২০১৮ সালে নেয়া উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শুরু হয় বেশকিছু অবকাঠামো নির্মাণ। এতে এ পর্যন্ত কাটা পড়েছে প্রায় সাড়ে ৮00 গাছ। প্রকল্প শেষ করতে আরও প্রায় ২ শতাধিক গাছ কাটা পড়ার শঙ্কা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, কোনোরকম মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে গাছ, ভরাট হচ্ছে জলাশয়। এতে হুমকির মুখে পড়ছে প্রকৃতি-পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।

একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'আমাদের এখানের মূল আকর্ষণ পরিযায়ী পাখির আগমন দিন দিন কমে যাচ্ছে। শুধু তাই না, আমাদের এখানের যত জলাশয় আছে সেগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।'

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যাম্পাসে নানা প্রজাতির পাখপাখালি ও বন্যপ্রাণীদের কথা বিবেচনা না করেই কাটা হচ্ছে গাছ। এতে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে ধীরে ধীরে সবুজে ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয়টি রূপান্তরিত হচ্ছে ইট-পাথরের জঞ্জালে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, 'আমাদের পরিকল্পনায় আমাদের গাছপালাগুলো এবং এখানকার বন্য প্রাণীগুলোর আবাসস্থল সংরক্ষণ করে আমরা উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি।'

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি সব নিয়ম মেনেই মাস্টারপ্ল্যান করেই চলছে উন্নয়নকাজ। এমনকি সিন্ডিকেট সভাসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমোদন নিয়েই চলছে কাজ।

প্রকল্প পরিচালক নাসির উদ্দিন বলেন, 'মাস্টারপ্ল্যান রিভিউ কমিটি হয়েছে। সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর বুয়েটকে এ কাজটি করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। তারপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব প্ল্যানমতো এ উন্নয়ন কাজ চলছে।'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২টি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে 'অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প' নামের একটি প্রকল্প নেয়া হয়। যার আওতায় শিক্ষার্থীদের জন্য হল, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবন, স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণসহ ১২টি স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলমান। যেগুলোর বেশকিছুর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

এভাবেই একের পর এক গাছ কেটে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল ভবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, যথাযথ মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করা হলে বেঁচে যাবে সবুজে ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর