বিদেশে এখন
0

চীনের মেগাপ্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় এসেছে নেপাল

যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে এবার চীনের মেগাপ্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় এসেছে নেপাল। এর মধ্যদিয়ে ল্যান্ডলক দেশ থেকে ল্যান্ড লিঙ্ক দেশে পরিণত হবে নেপাল। কাঠমান্ডুর এমন বন্ধুত্বে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ভারতের। কিন্তু এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে নয়াদিল্লি বলছে, নেপালে চীনের অবকাঠামো প্রকল্প ভারতের জন্য হুমকি। পাশাপাশি চীনের ঋণ কূটনীতির চোরাবালিতে পড়ে যাচ্ছে নেপাল, যেখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন।

প্রতিবেশী দেশ ভারত আর নেপাল আন্তর্জাতিকভাবে ১ হাজার ৭শ' ৫১ কিলোমিটারের সীমান্তের অধিকারী। এরমধ্যে রয়েছে উপমহাদেশের হিমালয় পর্বতমালাও। অন্যদিকে, চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল তিবত্বের সঙ্গে নেপালের রয়েছে ১ হাজার ৩শ' ৮৯ কিলোমিটারের সীমান্ত। ভৌগোলিকভাবে ভারত আর চীনের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে নেপাল। অর্থনৈতিক আর অবকাঠামো খাতে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় দুই পক্ষের সঙ্গেই বজায় রাখতে হচ্ছে সুসম্পর্ক।

২০১৭ সালে চীনের মেগা প্রকল্প বেল্ট অ্যান্ড রোডের অংশ হয় নেপাল। বিআরআই প্রকল্পটি রাস্তাঘাট, করিডোর, বিমানবন্দর, রেললাইনের মেগা প্রকল্প, যা চীনের সঙ্গে এশিয়া, ইউরোপের পাশাপাশি যুক্ত করে অনেক দেশকে। ৭ বছর আগে নেপাল চীনের এই প্রকল্পের অংশ হলেও এতোদিন ভূমিকা ছিল নিষ্ক্রিয়। সম্প্রতি মেগা প্রকল্পের অংশ হিসেবে নেপালে অবকাঠামো উন্নয়নে বেইজিংয়ের সঙ্গে চুক্তি করে কাঠমান্ডু। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি জানান, বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়া দেশকে সহযোগিতা করবে চীন।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি বলেন, ‘অলি সবকিছু গুরুত্বপূর্ণ, যদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন না হয়, কোন নিরাপত্তাই কাজে লাগাতে পারবো না। ক্ষুধার্ত মানুষ কিছু করতে পারে না। অর্থনীতি সবার আগে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় চীন সাহায্য করছে। সম্মান জানানো উচিত।’

ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, নেপালে চীনের অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন নয়াদিল্লির জন্য হুমকি। এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব বাড়লে বিপাকে পড়তে পারে ভারত। অন্যদিকে, বেইজিংয়ের চুক্তিগুলো সন্দেহজনক। গণমাধ্যমগুলোর দাবি, বেশ কয়েকটি দেশ প্রকল্প বাস্তবায়নের খপ্পরে পড়ে চীনের ঋণজালে ফেঁসে গেছে। ঋণ কূটনীতি হিসেবে পরিচিত এই প্রকল্পগুলোর মধ্য দিয়ে চীন ছোট দেশগুলোকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়, ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে বেড়ে যায় সুদ হার। দেশ ফেঁসে যায় ঋণের জালে।

পাশাপাশি চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বিরুদ্ধে আগে থেকেই অন্য দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাতের অভিযোগ ছিল। যে কারণে নেপালের সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলের অনেকেই এই প্রকল্পগুলোর বিরোধিতা করছে। মেগা প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন নিয়ে দেশেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। যদিও নেপাল বলছে, চীনের সঙ্গে বিআরআই প্রকল্পে ভারতের বাধা দেয়া উচিত নয়। স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ হিসেবে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার নেপালের আছে।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্লোগানই, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে যেকোনো সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি। অন্য দেশের মতোই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারি। অন্যরা কি ভাবলো এটা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ নেই। আমরা বন্ধুত্ব সম্প্রসারিত করবো।’

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর পোখারার জন্য ২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিলো চীন। গেলো বছর এই বিমানবন্দর দিয়ে বিমান চলাচলও শুরু হয়। কিন্তু ভারতের উদ্বেগ থাকায় নিজ দেশের এয়ারলাইন্সগুলোকে এই আকাশসীমা ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলে নয়াদিল্লি। পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট না থাকায় লোকসান গুণতে থাকে পোখারা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

সড়ক, রেলপথ, বিমানবন্দর, সমুদ্রে বন্দর তৈরি, সব মিলিয়ে এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরিতে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড বা দ্যা বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ। অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় লক্ষ্য ছিল দেড় শতাধিক দেশে বিনিয়োগ করবে বেইজিং। ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১শ' ৪০ টি দেশে বিনিয়োগ করে ফেলেছে শি জিনপিং প্রশাসন। বিশ্লেষকরা বলছেন, পররাষ্ট্রনীতির অংশ এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে নিজেদের ক্ষমতার জানান দিতে শুরু করেছে চীন।

ইএ