রাজধানীসহ সারাদেশের অলিগলিতে অবাধেই চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। অথচ ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি এ ধরণের গাড়ি নির্মাণ আমদানি-বেচাকেনাও বন্ধের নির্দেশ রয়েছে হাইকোর্টের আদেশে।
এ অবস্থায় উত্তর সিটি করপোরেশন রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানিয়েছে। আর ঢাকার দুই সিটি থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশ দিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত কোনো গাড়ি (তিন চাকার) যেন ঢাকা সিটিতে না চলে। আমরা ২২টি মহাসড়কে নিষিদ্ধ করেছি। শুধু নিষেধাজ্ঞা নয়, চলতে যেন না পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
একদিকে সড়ক বিভাগ ও সিটি করপোরেশন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ চাইছে। অথচ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলে আসছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বাংলাদেশের টেসলা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, জ্বালানি তেল সাশ্রয়ে বাজারে যাতে ইলেকট্রিক গাড়ি আসে সেজন্য তারা উৎসাহিত করে। এছাড়া গত ১৩ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকেও সড়ক পরিবহন সংশোধন আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। সেখানে ব্যাটারিচালিত যানবাহনকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইন, জেল-জরিমানা কোনো কিছুরই কমতি নেই। তার পরও বেপরোয়া গতি, লক্কড়-ঝ্ক্কড় বাস, হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল। এ যেন আইন ভাঙার প্রতিযোগিতা।
সবশেষ রাজধানীর বনানী এলাকায় দূরপাল্লার বাসে গেটলক সার্ভিস চালু করা হয়। অথচ শুরু হতে না হতেই চলছে অনিয়ম।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘এত রাস্তা বাংলাদেশে, সমতল থেকে পাহাড়ে সুন্দর সুন্দর রাস্তা। এত রাস্তা হবার পরও শৃঙ্খলা নেই কেন। শৃঙ্খলা না থাকলে আমরা সুফল পাবো না। যানজট কমতে হবে, দুর্ঘটনা কমতে হবে। দুর্ঘটনা হলে তো কাউকে কেউ কিছু বলে না। শুনতে হয় আমাকে। কেউ বলে না বিআরটিএ চেয়ারম্যান কী করছে, সবাই আমাকে বলে।’
আজকের বৈঠকে এ সময় মোটরসাইকেলে নো হেলমেট নো ফুয়েল- এই নীতি চালুর নির্দেশনা দেয়া হয়। একইসঙ্গে ঢাকার রাস্তায় ৪০ বছরের পুরানো গাড়ি কিভাবে চলে সেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন খোদ সড়ক পরিবহন মন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নো হেলমেট নো ফুয়েল এই নীতিতে যাবো মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে। শুধু ঢাকা নয় হেলমেট না থাকলে দেশের কোথাও মোটরসাইকেল চলতে পারবে না। ৪৩ বছরের পুরানো গাড়ী কীভাবে চলে রাস্তায়? লক্কড় ঝক্কড় গাড়ি দেখলে মনে হয় না দেশ এগিয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা না এলে মেগা প্রকল্পের সুফল পাবো না। যানজট, দুর্ঘটনা না কমালে কী লাভ এত আইন করে?’
তিনি জানান, ঢাকার চেয়ে গ্রামের গাড়িগুলো ভালো। এতোদিন কী করছিল বিআরটিএ জানতে চান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
তবে দুর্ঘটনা ঘটলে কেবল চালক দায়ী এটা মানতে নারাজ শ্রমিক নেতারা। বরাবরের মতোই শ্রমিকদের পক্ষে কথা বলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান। মেয়াদোত্তীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলোকে ডাম্পিং নয়, সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের সুপারিশ করেন তিনি।
সভায় উঠে আসে সড়ক কর কারা নেবে সে বিষয়টিও। রোড ট্যাক্সের শতভাগ যায় সড়ক বিভাগের কাছে। কিন্তু ঢাকা সিটির সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার কাজ করে সিটি করপোরেশন। তাই তাই এর রোড ট্যাক্সের বাৎসরিক একটা অংশ দাবি করেন দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী ও বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।