ধানের কুড়া থেকে তৈরি ভোজ্য তেল রাইসব্রান অয়েল। দেশের বাজারে তেমন চাহিদা না থাকলেও ভারতে রপ্তানি করে ঈর্ষনীয় সফলতা দেখায় বগুড়ার হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
২০১৮ থেকে ২২ সাল পর্যন্ত এই পাঁচ বছরে বগুড়া থেকে পাশের দেশ ভারতে রপ্তানি করা হয় ১৮ কোটি ৭৭ লাখ ২৯ হাজার ২৭৬ দশমিক আট আট ইউএস ডলারের রাইস ব্রান। ২০২২ সালেও ৩ কোটি ৮০ লাখ ইউএস ছাড়িয়ে যায় রপ্তানির পরিমাণ। পরের বছর ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯২ ইউএস ডলার রপ্তানি কমে যায় এ খাতে।
রাইস ব্রান রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বগুড়া মাল্টি অয়েল মিলস। প্রায় সাত মাস ধরে রাইস ব্রান ক্রুড অয়েল রপ্তানি বন্ধ রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মকর্তারা বলছেন, টন প্রতি প্রায় ১ হাজার ডলার উৎপাদন খরচ পড়লেও ভারতের বাজারে দাম এখন সাড়ে ৮০০ ডলার। তাই রপ্তানি বন্ধ রেখে নিজের ফিড মিলে ক্রুড অয়েল ব্যবহার করছেন তারা।
বগুড়া মাল্টি অয়েল মিলের ফ্যাক্টরি ম্যানেজার হাফিজার রহমান কবীর বলেন, 'ভারতে বাজার কমে যাওয়ায় আমাদের বিক্রি হচ্ছে না। রপ্তানি না হওয়াতে আমাদের ফিড মিলগুলোতে আমরা ব্যবহার করছি। যদি রপ্তানি বাড়াতে চাই, তাহলে যদি বাংলাদেশ সরকার ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেয় তাহলে রপ্তানিটা বাড়বে।'
২০১২ সালে বগুড়ায় প্রথম রাইস ব্রান অয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মজুমদার প্রোডাক্টস লিমিটেড। অন্য বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পরিশোধনের ব্যবস্থা না থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধন করে বোতলজাত রাইস ব্রান অয়েল ভারতে রপ্তানি করতো। বাজার পড়ে যাওয়ায় মজুমদার প্রোডাক্টসও রপ্তানি বন্ধ করেছে।
কার্ডধারীদের দেয়ার জন্য জানুয়ারীতে ১৮৯ কোটি ৬০ লাখ টাকায় ১ কোটি ২০ লাখ লিটার রাইস ব্রান অয়েল কিনতে তিন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে টিসিবি। দেশের বাজারে এই তেলের ব্যবহার বাড়াতে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
মজুমদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্ত মজুমদার বলেন, 'যেহেতু এটা ভোজ্য তেল এবং ভালো গুণ সম্পন্ন একটা তেল, সেজন্য এটা আমরা বাজারজাত করি। এখন টিসিবি এই তেল আমাদের কাছে থেকে কিনছে। তারা কার্ডধারীদের মাঝে এই তেল দিচ্ছে যে জন্য আমাদের এ পণ্য দেশে বাজারজাত করা সহজ হইছে।'
এ পর্যন্ত শুধুমাত্র পাশের দেশ ভারতেই রপ্তানী হয়েছে রাইসব্রান অয়েল। রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যবসায়ীদের ভর্তূকি ও ভারতের পাশাপাশি অন্যদেশগুলোতেও রাইস ব্রান অয়েলের বাজার খোঁজার দাবী ব্যবসায়ী নেতাদের।
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সহ-সভাপতি মাহফুজুল ইসলাম রাজ বলেন, 'রাইসব্রান তেল শুধু ভারতই আমাদের কাছে থেকে নেয়। এর বাইরে বিকল্প কোনো মার্কেট আমরা এখনও খুজেঁ পাইনি। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের রপ্তানি করা সম্ভব। আমরা সে পণ্যগুলো নিয়ে কাজ করছি।'
ধানের তুষ তুলে ফেলার পর চালের ওপরের লালচে আবরণই মুলত রাইস ব্র্যান । বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সেই রাইস ব্র্যানের নির্যাস থেকে আসে ক্রুড অয়েল। পরিশোধন করার পর পাওয়া যায় ভোজ্য তেল। অবশিষ্ট ডি অয়েলড রাইস ব্র্যান আবার ব্যবহার হয় পশু-পাখির খাদ্য হিসেবে। সারাদেশে ১৭টি মিলের মধ্যে সচল ১৫টি'র মধ্যে বগুড়াতেই আছে পাঁচটি রাইস ব্রান অয়েলের মিল।