দেশে এখন
0

গরমে সবচেয়ে বিপাকে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ

তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস যখন দীর্ঘশ্বাসে, জীবন খতিয়ানে তখন পিঠ পুড়ছে মজুর খাটা মানুষের। কেননা মাঠে মাঠে চলছে বোরো ধান কাটা,মাড়াই, সিদ্ধ'র কাজ। তীব্র গরমে সবচেয়ে বিপাকে ময়মনসিংহের নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা। তবে কাজ ছাড়া যাদের ভাত জোটে না তাদের তো আর বসে থাকার উপায় নেই। তাই গ্রীষ্মের এই তাপদাহ উপেক্ষা করেই ফসলের মাঠে মাঠে কাজ করছেন কৃষকরা।

সেই কাক ডাকা ভোর থেকেই, ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা থেকে আসা কয়েকজন শ্রমিক বোরো ধান কাটার কাজ করছেন  ফুলবাড়িয়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। রোদের কারণে খুব বেশি সময় ধরে কাজ করতে পারছেন না বলে জানান তারা। এদিকে মাঠ জুড়ে অধিকাংশ ধান পেকে গেলেও  শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।

লক্ষ্মীপুর গ্রামে কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, 'ধান আবাদ কইরা আমগর আর পুষায় না অহন, রুয়া(ধানের চারা) লাগানো থেইকা ধান কাটা পর্যন্ত যে খরচ, বাজারে ধান বেইচাও দাম পাইনা, অহন এমুন গরম কামলা পাউন যাইতাছপ না। গরমে কামলারা কাজ করতে পারতাছে না। এর মধ্যে ঝর তুফান আইলেতো আরো সর্বনাশ।' 

ময়মনসিংহ জেলা কৃষি অফিসের তথ্য বলছে জেলায় এবার বোরো আবাদ হয়েছে ২ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ পরিচালক ড.নাসরিন আক্তার বানু।

গরমে সবচেয়ে বেশি কষ্ট যারা করে তার হলো শিশু এবং  প্রবীণ। তাই ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার চকরাধাকানাই পাল পাড়ার কয়েশ বছরের পুরনো বদ্ধ পুকুরে গরম থেকে বাঁচতে গোসলে মেতেছে পাড়ার একঝাক শিশুকিশোর।

এক সময় গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়িতে বড় গাছের দেখা মিললেও নগরায়নের কারণে গাছে কেটে উজার করা হচ্ছে। ফলে গ্রামেও এখন শহরের মতো গাছের ছায়া দেখা যায় না।

প্রবীণ অনিতা রানী পাল বলেন, 'আগের দিন অহন আর নাই। আগে গরম আছিলো, কিছু ছনের ঘরে, মাটির ঘরে থাকতাম, বেশি গরম লাগতো না।আর গরম লাগলে বাড়িড উঠানে  বড়  আম গাছ, জাম গাছ, বট গাছের নীচে বইয়া বাপ-ঠাকুর, ঘরের বউ ঝিয়েরা মিলা জিড়াইতাম,কগ গপসপ করতাম,  শইল (সরীর) ঠন্ডা হয়া যাইতো। হেই মানুষেরাও নাই, বড় বড় গাছও আর অহন নাই।সব গাছ কাইটা ফেলছে, আমগরও দিন ফুরাইছে অহন গরম করলেই আর কি করমু গাছের তলেই বইয়া থাহি।'

রোদ, বৃষ্টি , খড়ায় যতই আসুক প্রকৃতি মানুষের পরম বন্ধু, যা পৃথিবীকে এখনো বাসযোগ্য করে রেখেছে আমাদের জন্য।

ইএ