মরুর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। পৃথিবীর এই অংশটি দীর্ঘ সময় উত্তপ্ত ও শুষ্ক থাকে। এবার সেই দেশেই হলো রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি ও বন্যা। যা গত ৭৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে বিমানবন্দর, শপিংমল, বাসাবাড়ি সব পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির স্রোতে ভাসছে ফেরারি ও মার্সিডিজ বেঞ্জের মতো নামিদামি গাড়ি।
বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সবচেয়ে বাজে অবস্থায় পড়েছে। রানওয়ে থেকে শুরু করে বিমানবন্দরের প্রবেশপথ, পার্কিং এলাকা সবই পানির নিচে। ২৯০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। আরও প্রায় সাড়ে ৪০০ ফ্লাইট স্থগিত রাখা হয়েছে। গত বছর ৮০ মিলিয়নের বেশি যাত্রী পরিষেবা দিয়েছে এই বিমানবন্দর। এখনও পানি অপসারণের কাজ চলছে। যাত্রী চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
আরব আমিরাতে এমন ভয়াবহ বৃষ্টির জন্য ‘ক্লাউড সিডিং’ বা কৃত্রিম বৃষ্টিপাতকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। আকাশে ভেসে থাকা মেঘের ছোট কণাকে ঘণীভূত করে বৃষ্টি তৈরির জন্য ড্রাই আইস বা সিলভার আইয়োডাইড ব্যবহার করা হয়। যা বিমানের সাহায্যে মেঘের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হয়। তখন জলীয় বাষ্প সহজে ঘনীভূত হয়ে কৃত্রিম বৃষ্টি তৈরি হয়। পানির ঘাটতি মেটাতে কয়েক দশক ধরে এই কৌশল ব্যবহার করে আসছে দেশটি।
লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞানী কোলিন কলজা বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলে এ ধরণের বৃষ্টির ঘটনা সত্যিই বিরল। এ ধরণের প্রবল বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যার জন্য অনেকাংশে জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী। এর মধ্য অন্যা আরও কিছু বিষয় থাকতে পারে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুবাইয়ের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পেছনে সবার দৃষ্টি কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের দিকে। তবে দুবাই কর্তৃপক্ষ বলছে, বছরের এই সময়ে কখনোই ক্লাউড সিডিং করা হয় না। ভারি বৃষ্টির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা এসরা আলনাকবি বলেন, ‘এ সময়ে তো ক্লাউড সিডিং করা হয়নি। এই অবস্থার পেছনে কৃত্রিম বৃষ্টির কোনো প্রভাব নেই। সবকিছুই প্রাকৃতিক ছিল। এ সময় আমিরাতের মৌসুম পরিবর্তন হয়। তবে এবার স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।’
ভারি বৃষ্টি ও বন্যার জন্য কখনোই প্রস্তুত ছিল না মরুর এই দেশ। তাই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে শহরের কর্তৃপক্ষ। দুবাইয়ে ব্যাপক আকারে নগরায়ন হয়েছে। তবে পানি নিষ্কাশন বা ড্রেনেজ সুবিধা এতো ভারি বৃষ্টিপাত সহ্য করতে সক্ষম নয়। এখন বন্যা মোকাবিলায় নতুন করে ভাবতে হবে দেশটিকে।