শিল্প-কারখানা
অর্থনীতি
0

প্লাস্টিকের আধিক্যে বিলুপ্তির পথে মৃৎশিল্প

একসময় বৈশাখ উপলক্ষে কয়েক মাস আগেই ব্যস্ত হয়ে পড়তেন বাঁশ-বেত ও মৃৎ শিল্পীরা। তবে এখন সময় পাল্টেছে। প্লাস্টিকের আধিক্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামীণ শিল্প বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। তাই এ পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ-বেত ও মৃৎ শিল্পের নানা শিল্পকর্ম। ফুরিয়ে আসছে এসব পল্লীর কর্মব্যস্ততা। বাজার সংকুচিত হয়ে পড়ায় সংসারে তৈরি হয়েছে টানাপোড়েন। তাই পেশা বদলাচ্ছেন শিল্পী-কারিগররা।

কুমিল্লা নগরীর ২২ নং ওয়ার্ড ঘোষপাড়ার সন্তোষ পাল। পহেলা বৈশাখের আগমন ঘিরে তৈরি করতেন মাটির পশু,পাখি, পুতুল, শিশুদের খেলনা সামগ্রী থেকে নানা তৈজসপত্র। এবার তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল সুনসান নীরবতা। জানালেন, শতবর্ষী বিভিন্ন মেলা বন্ধ হয়ে গেছে। বিপণনের পরিধি কমে আসায় ছাড়ছেন এ শিল্প। জেলায় তাদের সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার মাটির নানা শিল্পকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে গুটি কয়েক পরিবার এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।

একই অবস্থা কুমিল্লার বিজয়পুরের মৃৎশিল্পেও। জ্বালানি সংকটে তারাও তৈরি বন্ধ রেখেছেন বৈশাখী মেলার বিভিন্ন শিল্পকর্ম।

মৃৎ শিল্পকর্মের কারিগর সন্তোষ পাল বলনে, 'প্লাস্টিকের প্রতি চাহিদা হয়ে গেছে এখন মানুষের। আর মাটির জিনিসের প্রতি আগ্রহ নেই তাদের। মাটির জিনিসের এখনো ডিমান্ড অনেক যদি প্লাস্টিকের জিনিস উঠে যেত বাজার থেকে।'

বিজয়পুর সমবায় মৃৎ শিল্পের একজন বলেন, 'মৃৎ শিল্প দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা যেত। প্লাস্টিক না থাকলে রপ্তানি আরও বেশি করা যেত। বৈদিশক মুদ্রা দেশে আরও বেশি আসতো এবং কর্মসংস্থানের জায়গা তৈরি হতো।'

এদিকে মৃৎ শিল্পের মতো করুণ দশা বাঁশ-বেত শিল্পেও। কুমিল্লা নগরীর সংরাইশ বৈষ্ণব পাড়া এবং জেলার হোমনার শ্রীমদ্দি গ্রাম ছিল বাঁশির জন্য বিখ্যাত। বৈশাখী মেলা ঘিরে এসময় অর্ধশতাধিক পরিবারে ছিল ব্যস্ততা। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপারিরা কুমিল্লা থেকে বাঁশি নিয়ে বিক্রি করতেন বৈশাখী মেলায়। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও জনপ্রিয় শ্রীমদ্দির বাঁশি। নানান বাহারি ডিজাইনের এ বাঁশি তৈরিতে ব্যস্ত থাকতেন গৃহকর্তা, কর্ত্রীর পাশাপাশি তাদের সন্তানরাও। তবে এ শিল্প এখন অস্তিত্ব সংকটে। বাঁশ-বেত শিল্পে জড়িত কুমিল্লার নমঃশূদ্র পল্লীর পরিবারগুলোও ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

বৈষ্ণব পাড়ার মানিক গোস্বামী, কৃষ্ণ দাস ও স্ত্রী বানু রানী গোস্বামী জানালেন, তাদের পাড়ায় এক সময় ১০-১২ পরিবার পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন নাম ও ডিজাইনের বাঁশি তৈরি করতেন। সেই সোনালী দিন বদলে এখন তিন পরিবারে ঠেকেছে। বৈশাখী মেলা উদযাপনে বাঁধা এবং নতুন প্রজন্মের কাছে কদর কমে যাওয়ায় তারাও টানাপোড়নে।

বাঁশি তৈরির কারিগর মানিক গোস্বামী বলেন, 'আগে বড় মেলা হতো কয়েকদিন ধরে। তখন কাজ করতে হতো অনেক। এখন মেলা বন্ধ হয়ে গেছে আমাদের কাজও বন্ধ। মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।'

বৈশাখী মেলা মানেই বাঁশ-বেত ও মৃৎ শিল্পের নানা শিল্পকর্ম। তাই এ শিল্পকর্মকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি উদ্যোগ চান সংস্কৃতিমনা মানুষেরা।

ইএ