দিন যাচ্ছে আর কোণঠাসা হচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। একের পর এক শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেঙে পড়েছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এ সেনাবাহিনী। ১ লাখ ৩০ হাজার সেনার এই বাহিনী এখন ভুগছে সেনা সংকটে। তাই দেশের তরুণ সমাজকে বাধ্য করছে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে। তিন বছর আগে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতায় আসা জান্তা সরকার সাধারণ মানুষের জনপ্রিয়তাও হারিয়েছে।
সংঘর্ষ ও সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার ভয়ে প্রতিবেশি দেশে পালাচ্ছে মিয়ানমারের হাজারও বাসিন্দা। থাইল্যান্ড সীমান্ত তাদের জন্য হয়ে উঠেছে নিরাপদ আশ্রয়। মিয়ানমারের সঙ্গে ছোট একটি কাঠের সেতু দিয়ে সংযুক্ত থাইল্যান্ডের ওয়েল গ্রাম। এর নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু নদী সীমানা তৈরি করেছে দুই দেশের মধ্যে। ছোট এই ব্রিজ দিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চলে নানা বাণিজ্য। সীমান্তে কড়াকড়িও এতোটা নেই।
সম্প্রতি মিয়ানমারে অস্থিরতা শুরুর পর এই পথ দিয়ে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে থাইল্যান্ডে প্রবেশ। তাদের আশা এখানে পৌঁছলেই মিলবে নিরাপদ আশ্রয়। মিয়ানমারে সামরিক কাজে যোগ না দিলে দেয়া হবে কয়েক বছর জেল। তাই জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তরুণ-তরুণীরা।
তারা বলেন, জান্তা বাহিনীর হামলা ও সংঘর্ষে মিয়ানমারে আমরা শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম না। আমরা একসময় মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছি। আমি নিজ দেশে ভয় পাই। সীমান্ত পার হওয়ার পর নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছে। মা ও ছেলে আমরা দুজন মিলে প্রথম এখানে আসি। এটি রাজনৈতিক সমস্যা। একদিন মিয়ানমারের পরিস্থিতি ভালো হবে।
কাঁটাতার, জঙ্গল, নদী পেরিয়ে মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ডে ঢুকে নিয়মিত যাত্রীদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে তারা। এ পরিস্থিতির জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না থাই সরকার। আপাতত শরণার্থীদের খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে থাইল্যান্ড। ইতিমধ্যে মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্ত এলাকার ২ হাজার কিলোমিটার অংশে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ডে এসে অনেকেই দিনমজুরের কাজে জড়াচ্ছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডেরও সস্তা শ্রমিক দরকার। দেশটিতে মিয়ানমারের প্রায় ৩০ লাখ নাগরিক রয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, থাইল্যান্ডের জিডিপির সাড়ে ৬ শতাংশ মিয়ানমারের অভিবাসী শ্রমিকদের অবদান। এছাড়া কম মজুরিতে শ্রমিক পেয়ে ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছে থাই অর্থনীতি। ফলে অনুপ্রবেশ নিয়ে অনেকটা উদাসীন থাই কর্তৃপক্ষ। পালিয়ে আসা মিয়ানমারের বাসিন্দারা আর নিজ দেশে ফিরতে চান না। থাই সরকারের বৈধতার আশায় আছেন তারা।