দেশে এখন

ময়মনসিংহে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরবাসী

ময়মনসিংহ নগরীতে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরবাসী। খাল-ড্রেনগুলো পরিণত হয়েছে মশার প্রজনন কেন্দ্রে। মশক নিধনে সিটি করপোরেশন ক্রাশ প্রোগ্রাম নিলেও এতে তেমন একটা কাজে আসছে না। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে শঙ্কা চিকিৎসকদের।

৯২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ময়মনসিংহ নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে বসবাস করেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। যানজট, ধুলোবালি, ময়লা-আবর্জনাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত নগরবাসীর কাছে এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে মশার উপদ্রব। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হচ্ছে বাসিন্দারা।

গরমের শুরুতেই বেড়েছে মশার যন্ত্রণা। সম্প্রতি কয়েকদিনের হালকা বৃষ্টিতে বেড়েছে মশা। প্রবাহ না থাকায় ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ ড্রেন-খালগুলো পরিণত হয়েছে মশার প্রজনন কেন্দ্রে।

কয়েল জ্বালিয়ে মশা তাড়ানোর চেষ্টা করছেন জহুরা আক্তার। ছবি: এখন টিভি

নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের আউটার স্টেডিয়াম এলাকার একজন বাসিন্দা জহুরা আক্তার। দিনের বেলায়ও কয়েল জ্বালিয়ে চেষ্টা করেন মশা তাড়ানোর জন্য। তারমতো অনেকেরই এখন ভরসা কয়েল ও মশারিই। রাতের বেলায় মশার দাপট বাড়ে কয়েকগুণ।

জহুরা বলেন, 'মশার জ্বালায় সন্ধ্যা থেকেই মশারি টানাতে হয়। বাচ্চাদের দিনরাত ২৪ ঘণ্টা মশারি দিতে হয়।'

স্থানীয় একজন বলেন, 'জানালা খোলা যায় না। একেবারে সব মশা চলে আসে জানালা খুললেই। বাচ্চাদের স্কুল কোচিংয়ে নিয়ে গেলে ওখানেও মশা কামড়ায়।'

মশা মারার জন্য ওষুধ দেয়া হচ্ছে। ছবি: এখন টিভি

নগরীর পানি নিষ্কাশনের ড্রেন-খালের ময়লা-আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ওষুধ ছিটিয়েও কোনো কাজে আসছে না অভিযোগ নগরবাসীর। মশার কামড়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে শিশুরা। হাতে-পায়ে মশার কামড় আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ডেঙ্গুর।

গত বছর ময়মনসিংহ মেডিকেলে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হন ৩ হাজার ৭৩৩ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয় ১৩ জনের। চলতি বছরও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে এডিসের লার্ভা। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে শঙ্কা চিকিৎসকদের।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মহিউদ্দিন খান মুন বলেন, 'আমরা এই বছর যদি ডেঙ্গু মশার বিস্তার রোধ করতে না পারি, এবং জনগণের সচেতনতা না বাড়ে তাহলে এ মহামারি এবারও ব্যাপকভাবে হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।'

জমে থাকা পানিতে জন্ম নিচ্ছে এডিস মশার লার্ভা। ছবি: এখন টিভি

ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, 'শীতের পরে যখন আস্তে আস্তে গরমের দিকে আসে তখন মশার বংশবৃদ্ধি বেশি হয়। ড্রেন বা ময়লার ঝোপঝাড় পরিষ্কার না করলে মশার বংশবৃদ্ধি বেড়ে যাবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ তখন বেড়ে যেতে পারে।'

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, সঠিক নিয়মে প্রয়োগ না করা এবং একই ওষুধ দীর্ঘদিন প্রয়োগে কার্যকারিতা হারিয়েছে কীটনাশক।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন বলেন, 'লার্ভা দমনের জন্য যে ওষুধ প্রয়োগ করা হয় তা অধিক পরিমাণ পানি ব্যবহার করায় আরও বেশি ডায়লুট হয়ে যায়। এই ডায়লুট হওয়ার কারণে ওষুধের কার্যকারিতা হারায়।'

কীটনাশক ছিটিয়েও দমন করা যাচ্ছে না মশা। ছবি: এখন টিভি

সিটি করপোরেশন বলছে, এ বছর মশা নিধন ও বিস্তার ঠেকাতে নেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা। গত বছরের তুলনায় এ খাতে ৪৫ বেশি বরাদ্দ দিয়ে খরচ করা হবে ১ কোটি টাকা। তবে, নগরবাসীর সচেতনতা ও সহযোগিতা ছাড়া মশক নিধনে সফলতা সম্ভব নয়।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব মো. আরিফুর রহমান বলেন, 'আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। কারণ শুধু সিটি করপোরেশন কাজ করলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এতে জনগণকেও সম্পৃক্ত হতে হবে। আশেপাশে যেসব পানি জমে থাকে তা পরিষ্কার করতে হবে। আর বাজেট যে পরিমাণ বরাদ্দ আছে তা বাড়ানো দরকার। নিত্যনতুন বসতি বাড়ছে। সেজন্য মশক নিধন কার্যক্রমও বাড়ানো দরকার।'

এদিকে মশার যন্ত্রণায় মানুষ যখন অস্থির তখন টান পড়েছে পকেটেও। কয়েল, স্প্রে ও মশারির কিনতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। চাহিদা বাড়ায় দাম বেড়েছে এসব সামগ্রীর।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর