অর্থনীতি
বিদেশে এখন

নৌ-বাণিজ্যে নতুন ঝুঁকি সোমালি জলদস্যু

লোহিত সাগরে হুতিদের অব্যাহত হামলা আর আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের পুনরুত্থান বৈশ্বিক সাগরপথের বাণিজ্যকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। যে কারণে জাহাজের নিরাপত্তায় সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ দেয়া থেকে শুরু করে বীমার খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ।

প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার বাণিজ্যিক জাহাজ সোমালিয়ার জলপথ ধরে লোহিত সাগর এবং সুয়েজ খাল দিয়ে চলাচল করে। এসব জাহাজে বিভিন্ন জ্বালানি, তৈরি পোশাক, মৎস্য ও ভোগ্যপণ্য থাকে। যে কারণে বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই জলপথ।

লোহিত সাগরসহ আশপাশের জলপথে বাণিজ্যিক জাহাজে ইয়েমেনের হুতিদের হামলা আতঙ্কের মধ্যেই ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। এতে করে বাণিজ্য ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে বিশ্বকে। সাগরপথের বাণিজ্যে নতুন সংকট যোগ হয়েছে।

পাঁচটি শিপিং কোম্পানির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত সোমালিয়ার জলদস্যুরা ২০টির বেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালিয়েছে। এতে জাহাজে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ এবং বীমার খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে তিনদিনের জন্য একটি সশস্ত্র রক্ষীদল নিয়োগের খরচ ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চে একলাফে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। একইসঙ্গে মুক্তিপণ দেয়ার শঙ্কাও বেড়েছে।

গত ১২ মার্চ ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাইয়ের পর সোমালি জলদস্যুদের পুনরুত্থানের বিষয়টি সামনে আসে। তবে তাদের এই পথে কেন আসতে হলো? গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, সম্প্রতি সোমালিয়ার উপকূলে অবৈধভাবে বিদেশি মাছ ধরার নৌযানগুলোর আধিপত্য বাড়ায় স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়ছে। যে কারণে অর্থ উপার্জনে জলদস্যুতার মতো অপরাধের পথে পা বাড়াচ্ছে অধিকাংশ তরুণ।

সোমালিয়ার বাসিন্দারা বলেন, আমাদের সমুদ্রসীমায় বিদেশি নৌযান এসে অবৈধভাবে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা জীবিকা হারাচ্ছি। তাই জলদস্যুতার মতো পথে অনেক তরুণ পা বাড়াচ্ছেন। অর্থ উপার্জন ও প্রতিশোধের জন্য হাতে বন্দুক তুলে নিচ্ছেন।

একজন বলেন, জলদস্যুতার জন্য সোমালি তরুণদের অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে একটি পক্ষ। যারা আড়ালে থেকে প্রচুর উপার্জন করছে। এসব সুবিধাভোগীদের বেশিরভাগ সোমালিয়ার বাইরে থাকে।

এমন উত্তেজনার মধ্যে নিজেদের সমুদ্রসীমা রক্ষায় নতুন প্রশিক্ষণ নিচ্ছে সোমালিয়ার নৌবাহিনী। অঙ্কুরেই জলদস্যুদের পুনরুত্থান গতি থামাতে চান দেশটির প্রেসিডেন্ট।

সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহামুদ বলেন, বর্তমানে যা ঘটছে তা নিয়ে খুব বেশি ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে জলদস্যুতা হুমকি আরও বাড়ার আগেই তাদের থামানোর জন্য আমাদের এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, বর্তমানে লোহিত সাগর এলাকায় হুতি আতঙ্ক জলদস্যুতাকে উৎসাহিত করছে। যা নিয়ন্ত্রণে আমাদের আন্তর্জাতিক সহায়তা দরকার।

এদিকে গত ১৭ মার্চ সোমালিয়ার উপকূল থেকে প্রায় ২৬০ নটিক্যাল মাইল দূরে মাল্টার পতাকাবাহী জাহাজ এমভি রুয়েনকে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত করে ভারতীয় নৌবাহিনী। এসময় ১৭ জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়। এরপর সেই জাহাজ থেকে আটক ৩৫ সোমালি জলদস্যুকে বিচারের জন্য ভারতের মুম্বাইয়ে নিয়ে আসে দেশটির নৌবাহিনী।

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর