শিক্ষা
দেশে এখন

দেশে হতাশায় বাড়ছে শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনা

ক্রমেই বাড়ছে আত্মহত্যার সংখ্যা। অনেকেই মর্মান্তিক এই কাজ করার আগে সামাজিক মাধ্যমে সুইসাইডাল নোট দিয়ে তার মৃত্যুর কারণও জানান দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। নিঃসঙ্গতা, বিষণ্ণতা ও সম্পর্ক নিয়ে হতাশা থেকেই শিক্ষার্থীরা এ পথ বেছে নিচ্ছে বলে মত সমাজ বিশ্লেষকদের।

সম্প্রতি সংগীত শিল্পী সাদি মহম্মদ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে চলছে আলোচনা সমালোচনা। সাদি মহম্মদ আত্মহত্যায় দীর্ঘদিনের একাকীত্ব ও বিষণ্ণতাকে মূল কারণ মনে করছেন তার সহকর্মীরা। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবন্তিকা আত্মহত্যার আগে সহপাঠী আম্মান ও শিক্ষক দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেছেন। পরবর্তীতে তাদের গ্রেপ্তারও করা হয়।

কী কারণে ও কেন বাড়ছে আত্মহত্যা এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীরা মনে করেন, পড়ালেখার চাপ, পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল ও চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তা। শিক্ষার্থীরা এমন পরিস্থিতিতে কেন পড়ছে আর এ থেকে বের হওয়া নিয়ে কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তাদের মধ্যে একজন বলেন, 'নিজের মধ্যে সমস্যা আটকে রাখাই আত্মহত্যার একটি বড় কারণ।'

দুজন নারী শিক্ষার্থী মনে করেন, অনেকেই সামান্য ঘটনায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বন্ধুবান্ধব-শিক্ষকদের কাছে সমস্যা বললে কেউ না কেউ এগিয়ে আসে। অনেক ক্ষেত্রে নিজের ব্যর্থতার দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায় বলে দাবি তাদের।

আত্মহত্যা ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সারাদেশে আত্মহত্যা করেছে ৫১৩ শিক্ষার্থী। ২০২২ সালে ৫৩২ শিক্ষার্থী আর ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছে ১০১ শিক্ষার্থী। আরেকটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন।

শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মনোসামাজিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান বলেন, 'বাড়তি প্রত্যাশা ও অল্প সমস্যায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়া শিক্ষার্থীরাই আত্মহত্যা বেশি করে। কারও ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আত্মহত্যা করা কোন সমাধান হতে পারে না।'

প্রচার-প্রচারণায় মাধ্যমে আত্মহত্যার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করার পরামর্শ দেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, 'বেশিরভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যুক্ত থাকে। অর্থাৎ বিষণ্ণতা, মাদকাসক্তি, ব্যাক্তিগতভাবে ভেঙে পড়াসহ অনেক রোগের কারণে বড় একটা অংশ আত্মহত্যা করে। যে সকল মানসিক রোগগুলোর চিকিৎসা করা হয় না, তার সবশেষ পরিণতি হতে পারে আত্মহত্যা। বিশেষ করে বিষণ্ণতার মতো রোগ।'

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা'র তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতিবছর আত্মহত্যা করে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এই সংখ্যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে প্রতিবছর আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অন্তত ১৩ হাজার মানুষ।

এভিএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর