আফ্রিকা
বিদেশে এখন
0

সোমালিয়ার অর্থনীতির চালিকাশক্তি জলদস্যুতা

হুতি আতঙ্কের মধ্যেই বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য নতুন হুমকি হয়ে উঠেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। কিন্তু স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের দেশ থেকে কীভাবে জলদস্যুতা নির্ভর অর্থনীতির দেশে পরিণত হল সোমালিয়া?

লোহিত সাগরে চলমান হুতি আতঙ্কে ধুঁকছে বিশ্ব বাণিজ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ এই রুট বাদ দিয়ে আফ্রিকা ঘুরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলচলে খরচ হচ্ছে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ। এ অবস্থায় দেশে দেশে যখন অর্থনৈতিক সংকট বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা বাড়ছে, ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা।

ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজসহ ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এখন আলোচনায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা।

ষাটের দশকে যে দেশটি স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের পরিচয় বহন করতো, হঠাৎ সেই দেশটিই কেন জলদস্যুতার তকমা পেলো? ইতিহাস বলছে, ১৯৬৯ সালে দেহরক্ষীদের হাতে দেশটির দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট আলী শারমার নিহত হওয়ার পর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন ততকালীন স্পিকার মুখতার মোহামেদ হুসেইন।

কিন্তু ছয় দিনের মাথায় জেনারেল সিয়াদ বারের নেতৃত্বে হওয়া সামরিক অভ্যুত্থানে দেশটির গণতান্ত্রিক যুগের অবসান ঘটে। সামরিক বাহিনীর স্বৈরাচারী শাসন চলে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। ছড়িয়ে পরে গৃহযুদ্ধ। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সমাজ ব্যবস্থা। এরপর থেকেই সোমালিয়ার উপকূলে জলদস্যুতার উত্থান হয়।

জাতিসংঘ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য বলছে, মূলত দেশটির উপকূলে অবৈধভাবে মাছ ধরার ফলে জলদস্যুতার জন্ম। আরেকটি তথ্য থেকে জানা যায়, বিদেশি জাহাজ থেকে বিষাক্ত বর্জ্য ডাম্পিং করার প্রতিবাদে স্থানীয় জেলেরা সশস্ত্র দলে বিভক্ত হয়ে বিদেশি জাহাজগুলোকে এ অঞ্চল দিয়ে চলাচলে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে।

পরবর্তীতে বিকল্প আয় হিসেবে তারা বাণিজ্যিক জাহাজ ছিনতাই শুরু করে। এমনকি ২০০৯ সালের এক জরিপেও দেখা যায়, উপকূলবর্তী সম্প্রদায়ের প্রায় ৭০ শতাংশ দেশের জলসীমার মধ্যে বিদেশি জাহাজের প্রবেশ বন্ধে জলদস্যুতাকে শক্তভাবে সমর্থন করে।

বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, জলদস্যুদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দস্যুদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী হাত বোমা। বন্দিদের কাছ থেকে মূলত ইউএস ডলারের মাধ্যমে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। এভাবেই সোমালিয়াতে এখন বিশাল বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে জলদস্যুতা। অন্যান্য দেশে থাকা সোমালিয়রা এই ব্যবসায় বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করে থাকেন।

অভিযোগ রয়েছে সোমালিয়ার সেনাবাহিনী, কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা এমনকি অন্যান্য দেশের বড় বড় ব্যাবসায়ী এই লুটের টাকার ভাগ পেয়ে থাকেন। আর এভাবেই সোমালিয়ার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে জলদস্যুতা।