শ্রমিকের দক্ষ হাত আর গভীর মনোযোগ, সাথে উন্নত প্রযুক্তি আর নিরাপত্তা, এসবের মিশেলে চলছে নতুন নির্মাণ। একেকটি পাইল ঘিরে যেন গড়ে উঠছে নতুন সভ্যতা আর আর মজবুত পিয়ার যেন জানান দিচ্ছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ারের।
মূলত বর্তমানে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কিলোমিটারের পর কিলোমিটার শক্ত ভীতের ওপর ইতিমধ্যেই দাঁড়িয়েছে হাজারো পাইল আর তার ওপরে বসেছে পাইল ক্যাপ ও পিয়ার। কোথাও কোথাও এগিয়েছে পিয়ার ক্যাপের কাজও। নির্মাণ হচ্ছে মজবুত গার্ডারও। সবমিলিয়ে এ যেন যোগাযোগ খাতে নতুন অর্থনীতির হাতছানি।
এক্সপ্রেসওয়ে শুরু হয়েছে চন্দ্রা ও বাইপাইলের মাঝামাঝি শ্রীপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়াল সড়ক বাইপাইল ও আশুলিয়া বাসস্ট্যান্ড হয়ে উত্তরা বেড়িবাঁধ দিয়ে আব্দুল্লাহপুর মোড় অতিক্রম করে বিমানবন্দরের সামনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে গিয়ে মিশবে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, ইতিমধ্যেই পুরো কাজের ২০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। যেখানে ৫ হাজার পাইলের মধ্যে শেষ হয়েছে ২৮শ' ৩৬টি'র নির্মাণকাজ। ১৩শ' পাইল ক্যাপের মধ্যে ৪শ' ৫৪টি ও ১২শ' ৫০টি পিয়ারের মধ্যে শেষ হয়েছে ৩৮০টি'র নির্মাণের কাজ। এছাড়া চলছে পিয়ার ক্যাপ ও গার্ডারের কাজও।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অগ্রগতি। ছবি: এখন টিভি
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল সড়কের পাশাপাশি এর দুই পাশে করা হচ্ছে আরও দুইটি উড়াল সেতু যা হবে নদীর ঢেউ আকৃতির এবং এই জায়গায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও এই দুইটি সেতু নির্মাণের পর এখানকার বিদ্যমান সড়ক ও যে তিনটি ছোট সেতু রয়েছে তা পুরোপুরি সরিয়ে ফেলে এখানে তুরাগ নদের হারিয়ে যাওয়া অংশ ও জলাধার ফিরিয়ে আনা হবে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, 'আমাদের তিনটা নদী আছে এখানে। তিনটা নদীর মাঝখানে যে ছোট নদী আছে এবং দুই পাশের নদীটা বড়। রাস্তাটা মূলত জলাধারকে ডিস্টার্ব করেই করা হয়েছিল তখন আর বিকল্প ছিল না। আশুলিয়া থেকে যে সড়ক আছে তার পরবর্তীতে দুই লেনের ব্রিজ করা হবে এবং মানুষ বিনামূল্যে যাতায়াত করতে পারবে। এটা জলাধার হিসেবে ব্যবহার হবে। ভবিষ্যতে এই এলাকা মানুষ পর্যটন এলাকা হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।'
প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আশুলিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাইপাইলের শ্রীপুর পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে একশ একরেরও বেশি জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। যেখানে ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত ৩ হাজার ৯১ জনের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার জনকে ক্ষতিপূরণের চেক দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আব্দুল্লাহপুর অংশের মোড়ে আগে থেকেই বিআরটি প্রকল্পের আওতায় টঙ্গীমুখী একটি উড়াল সেতু থাকায় সেখানে কাজ করতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম কিংবা খুলনা বরিশাল অঞ্চলে যেতে কোন গাড়িকে আর ঢাকায় ঢুকতে হবে না। যা সরাসরি আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৪৪ কিলোমিটার উড়াল পথ দিয়ে চলে যেতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, 'এই ২৪ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মূলত সংযুক্ত হবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে। টোটাল দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৪৪ কিলোমিটার। উত্তরাঞ্চল থেকে যে গাড়িগুলো আসবে তারা যদি দক্ষিণাঞ্চলে যেতে চায় তাহলে ঢাকার সড়কে আসতে হবে না তারা উপর দিয়ে যাবে। আপনারা জানেন দিনের বেলায় ট্রাক চলাচল করতে পারে না ঢাকার ভিতর দিয়ে। সুতরাং এইটা অতন্ত কার্যকরী ব্যাপার হবে। জিডিপিতে আমাদের ০.২১ শতাংশ যোগ হবে।'
পুরো আশুলিয়া উড়াল সড়কের মোট ৭টি স্থানে গাড়ি ওঠানামার জন্য ১৪টি র্যাম্প থাকবে। যেখানে টোল থাকবে ৩টি পয়েন্টে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের মেগা প্রকল্প বড় অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে কার্গো যদি সময়মতো না যেতে পারে তাহলে আমাদের প্রতিযোগী কিন্তু অনেকেই আছে। সেইক্ষেত্রে এই অবকাঠামোগুলো নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপন করবে এবং ঢাকাকে বাইপাস করার সুযোগ দিচ্ছে। সেই হিসেবে এই বাণিজ্যিক গাড়িগুলো এবং অর্থনীতির যে কর্মকাণ্ড আছে সেক্ষেত্রে সরাসরি ভুমিকা রাখবে।'
২০১৭ সালে প্রকল্পটি পাস হওয়ার পর কাজ শুরু হয়েছে ২০২২ সালের দিকে। যা শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে জুনে। পুরো কাজটি শেষ করতে খরচ হবে প্রায় ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা।