পরিষেবা
অর্থনীতি
0

১৪ বছরে খুচরায় বিদ্যুতের দাম বাড়ল ১৩ বার

ঢাকা

ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে এবার বিদ্যুতের খরচ বাড়ছে ইউনিটপ্রতি ২৮ পয়সা থেকে ১ টাকা ৩৫ পয়সা পর্যন্ত। ধাপে ধাপে সরকারের ভর্তুকি তুলে নেয়ার কৌশলে সামনের দিনগুলোতেও বিদ্যুৎ কিনতে আরও বাড়তি পয়সা গুনতে হবে গ্রাহককে। পাওয়ার সেল বলছে- এই সমন্বয় প্রক্রিয়ায় খরচের পুরোটাই গ্রাহকের ওপর চাপালে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে ইউনিটপ্রতি অন্তত ৪ টাকা।

গেল বছরের শুরুতেই ৩ দফায় ১৫ শতাংশ বাড়ে বিদ্যুতের দাম। এরপরেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে পিডিবির লোকসান হয় ৪৩ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। আর ৩৯ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখতে হয় সরকারকে। এবার ভর্তুকি ধাপে ধাপে তুলে নেয়ার কৌশল হিসেবে এক বছরের মাথায় আরেকদফা বাড়ছে বিদ্যুতের দাম।

পিডিবির লোকসান ও ভর্তুকি। ছবি: এখন টিভি

এতে গেল ১৪ বছরে খুচরায় বিদ্যুতের দাম বাড়লো ১৩ বার। ভর্তুকি ধাপে ধাপে তুলে নিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন ও বিতরণে নিজের খরচ কমাচ্ছে সরকার। দায় বাড়ছে গ্রাহকের ওপরে।

এবার বিদ্যুতের হিসাব করা যাক- একটু পেছনে ফিরে। গেল ১০ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ২২ হাজার মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত সক্ষমতা প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট। এ পর্যন্ত আসতে ক্যাপাসিটি চার্জসহ উন্নয়ন ব্যয় হয়েছে অন্তত দুই লাখ কোটি টাকা। অপরদিকে অতিরিক্ত ভর্তুকি গেছে ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি।

বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদা। ছবি: এখন টিভি

এখন বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, প্রস্তাবিত মূল্যে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী দেড় কোটি লাইফলাইন গ্রাহকের প্রতি ইউনিটে বাড়বে ২৮ পয়সা। যার মাসিক বিল বাড়বে ২২ টাকা। সেচপাম্পে ইউনিট প্রতি বাড়বে ৪৩ পয়সা, যা মাস শেষে হবে ২৬২ টাকা। এর বাইরে আবাসিকে সর্বোচ্চ ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারী একজন গ্রাহকের বাড়বে প্রতি ইউনিটে ৪১ পয়সা; ২০০ ইউনিট ব্যবহার করলে যা হবে ৫৭ পয়সা। আর বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকের ক্ষেত্রে ১ হাজার ২০০ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিট বাড়বে ১ টাকা ৩৫ পয়সা।

গ্রাহকের মাসিক বিল। ছবি: এখন টিভি

পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ৩ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ থেকে সব ভর্তুকি তুলে নিতে চাইছে সরকার। এ সমন্বয় প্রক্রিয়ায় খরচের পুরোটাই গ্রাহকের ওপর চাপালে বিদ্যুতের দাম বাড়বে ইউনিটপ্রতি অন্তত ৪ টাকা। তবে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক বলছেন, ডিজেল ও ফার্নেসভিত্তিক কোনো ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাখবে না সরকার। এতে কমে আসবে উৎপাদন খরচ। আর দাম কিছুটা বাড়ানোর মাধ্যমে সমন্বয় হবে বাকিটা।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, 'আমি ভর্তুকি বলব না অর্থাৎ যে গ্যাপ ছিল সেটা সামান্য কমবে। সরকার তো ভর্তুকি সব দিচ্ছে না। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করায় সেটা  আবার অ্যাডজাস্ট হয়েছে।' 

তবে গ্যাসের দাম ক্যাপটিভ পর্যায়ে ৭৫ পয়সা বাড়ানোর কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পিডিবিরও লাভ থাকবে না বলে জানান তিনি।

ডিজি আরও বলেন, '৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা পিডিবির এখনো মাইনাসে আছে।'

এদিকে, বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে দাম না বাড়িয়ে বরং উৎপাদন ব্যয় কমানোর পরামর্শ জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের। এজন্য নিজস্ব গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মত তাদের।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফী বলেন, 'এ মুহূর্তে জনগনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। অন্যদিকে সরকারের কিন্তু উপায় নেই। সরকার এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অনেক ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সরবরাহ করতে হয়েছে। সরকার যদি নিজেদের গ্যাস ও কয়লা উন্নয়ন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতো, তাহলে এত ভর্তুকি দিতে হতো না।'

বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবির গড় ব্যয় ১২ টাকা। আর বিক্রিতে গড়মূল্য আছে ৮ টাকা ২৫ পয়সা। সরকার ভর্তুকি দেয় ইউনিট প্রতি প্রায় ৪ টাকা।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর