ন্যাটো সদস্যপদ চাওয়ার জেরে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হঠাৎ সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। কিয়েভ দখল রুশ সেনাদের জন্য কয়েকদিনের বিষয় মনে হলেও প্রতিরোধ যুদ্ধে অপ্রত্যাশিতভাবে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে ইউক্রেন। জেলেনস্কি সরকারের জন্য আসতে থাকে পশ্চিমা আর্থিক ও সামরিক সহায়তা।
তবে দুই বছর বাদে অনেকটাই বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক, লুহানস্ক ও বাখমুতের পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ইউক্রেন। সম্প্রতি দোনেৎস্কের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত আভদিভকা শহরেও উড়েছে রুশ পতাকা। বলা যায়, একের পর এক অঞ্চল হারিয়ে দিশেহারা ইউক্রেন। অথচ যে ন্যাটোর জন্য এতো লড়াই, সে জোটের সদস্য পদও এখনো মেলেনি ইউক্রেনের। দিন দিন কমছে পশ্চিমা সমর্থন। অস্ত্র ও সেনা সংকটের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ থেকে সহায়তার অর্থ আটকে গেছে।
যুদ্ধের কারণে প্রথমদিকে কিছুটা বেকায়দায় পড়তে হয় রাশিয়াকে। দেশটির অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি জ্বালানি তেল ও গ্যাস বিক্রিতে আসে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা। চীন ও ভারতের মতো বিকল্প অংশীদার খুঁজে অর্থনীতির ধ্বস সামালের মধ্যেই বিদ্রোহ করে বসেন পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র প্রিগোজিন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের কট্টর সমালোচক কারাবন্দী নাভালনিও ছিলেন বড় হুমকি। দুই ব্যক্তির আকস্মিক মৃত্যুর মাধ্যমে নিজের আধিপত্য আরও সুসংহত করেন ভ্লাদিমির পুতিন।
যুদ্ধের তিন বছরের প্রাক্কালে ইইউ, যুক্তরাজ্য ও কানাডার পর রাশিয়ার ৫ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই তালিকায় রাশিয়াকে সাহায্য করা তৃতীয় দেশের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ নিয়ে মস্কোর ওপর ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার তালিকা ছাড়িয়েছে ৪ হাজার। তবে কিয়েভকে অস্ত্র দেয়ার বদলে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত করা যুদ্ধে সুফল বয়ে আনবে না বলে মত বিশ্লেষকদের।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘আলেক্সি নাভালনির মৃত্যু ও পুতিনের নৃশংস যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় আমি ৫ শতাধিক নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করছি। নাভালনির মৃত্যুর জন্য পুতিন দায়ী।’
ম্যাককিন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ইভলিন ফারকাস বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর রুশ অর্থনীতি নির্ভর ছিলো। এখন রুশ সরকার নতুন প্রতিষ্ঠান খুঁজবে। তাই নিষেধাজ্ঞা সময়ের সঙ্গে হালনাগাদ করতে হবে। তাই আমার মনে হয় না, শুধু নিষেধাজ্ঞার কারণে যুদ্ধের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হবে। তবে ইউক্রেনকে দুরপাল্লার আর্টিলারি সরবরাহ করলে পট পরিবর্তন হতে পারে।’
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় দেড় কোটি নাগরিক। নিহত হয়েছেন ১০ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ২ বছর ও ক্রিমিয়া, সেবাস্তপোল দখলের একযুগ হয়ে গেল। ইউরোপের হৃদয়ের বড় ক্ষত ইউক্রেন যুদ্ধ।
আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ক্ষমতায় আসলে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতায় বসতে বাধ্য করবেন তিনি।