খুঁজে চলেছি, গ্রামীণ অর্থনীতি আর কারুশিল্পের দারুন এক উপকরণ বেত। ২৪ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটারের রাজশাহীতে তিন দশক আগে সহজলভ্য হলেও এখন তা বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ। ফসলের মাপজোক, সংরক্ষণ থেকে শুরু করে গৃহস্থ জীবনের নানা কাজে যার ছিলো বিশেষ প্রয়োজন। যা দিয়ে তৈরি হয়েছে এক সময়ের মাপজোকের একক ধামা, কাঁঠা বা দাড়িপাল্লা।
অবশেষে দূর্গাপুর উপজেলার সুখানদিঘী গ্রামে দেখা দিলো এমন দেশি বেতের ঝাড়। শুধুমাত্র এখানেই নয় এর পাশাপাশি বাগমারা এবং মোহনপুর উপজেলাতেও দেখা মেলে এমন দেশি বেতের ঝোপঝাড়ের। তবে সেগুলো বাঁশের ঝাড় এবং নদী পারেই দেখা য়ায় বেশি।
গ্রামবাসী বলেন, 'প্রতি একবছর পর পরই আমরা বেত বিক্রি করে দেই । এইগুলো কেটে নিয়ে যায়।'
কাঁঠ আর বাঁশের পর বনজ সম্পদ হিসেবে বেত এখনো ক্ষুদ্র রূপে অর্থের যোগান দেয় গ্রামীণ জীবনে। তবে কারিগরদের অভাবে গ্রামের ঝোপঝাড়ে জন্ম নেয়া বেত আসে শহরে।
স্বাধীনতার আগে সিলেটি ব্যবসায়ীদের শিখিয়ে দেয়া বেতের ব্যবহার রাজশাহী শহরের হোসনীগঞ্জের এই অংশকে পরিচিত করেছিলো বেতপট্টি হিসেবে। কাঁচামালের অভাবে সেসব দোকান এখন জৌলুস হারিয়েছে। এখনো গুটিকয়েক বেত কারখানার দেখামেলে নগরীর বন্ধগেল ও বিলসিমলা এলাকায়। যা টিকে আছে স্থানীয় সরুবেত, বার্মা, থাইল্যান্ড ও পার্বত্য অঞ্চল থেকে আসা বেতের ওপর।
বেতের কারিগররা বলেন, 'আগে বেতপট্টি ছিল পাকিস্তান আমলে সিলেটিরা কিছু ছিল ঐখানে। তখন তারা বেতের কাজ করতো। তারপর তো মারা গেছে তখন থেকে বেতপট্টিতে বাঁশের কাজ হয়।'
আরেকজন বলেন, 'গ্রামগঞ্জে যে বেত হয় ওই বেতগুলো চিকন। ওই বেতে ডিজাইনের কাজ করে। আর মোটা যেগুলো সেই বেত আমদানীর মাধ্যমে সব দেশের বাহিরে থেকে আসে।'
টিকে থাকা এইসব কারখানায় ব্যস্ততা থাকে বছরজুড়ে। বিভিন্ন আকারের কেটে আনা বেত প্রক্রিয়া করে তৈরি করা হয় আসবাব। ক্রেতার চাহিদা মাথায় রেখে সৌখিন ও রুচিশীল ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী বেতের নানা পণ্য তৈরি করেন শিল্পীরা।
দোকানদাররা বলেন, 'আমাদের এখানে বাচ্চাদের ঘুমানোর দোলনা, সোফা সেট, রকিং চেয়ার, ফুলের টব, আয়না, খাট ইত্যাদি বিক্রি করা হয়।'
আরেকজন বলেন, 'এখানে তৈরি হওয়া আসবাব সরবরাহ করা হয় আশপাশের বিভিন্ন জেলায়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য অন্তত ৭০ লাখ টাকা'
ব্যবসায়ীরা জানান, 'বাংলাদেশের সব জায়গায় আমাদের বেত চলেযায় খুচরা ও পাইকারি। এখান থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, নওগাঁ, বগুড়া যায়।'
আরেকজন বলেন, 'প্রতিমাসে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা এখান থেকে বিক্রি হয়। এরমধ্যে ২০-২৫ শতাংশ লাভ থাকে।'
ঐতিহ্য ধারনের পাশাপাশি বেতশিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রশিক্ষণ, ঋণসুবিধাসহ নানা কর্মসূচীর কথা জানান শিল্পগবেষক ও অর্থনীতিবিদরা।
বর্ণালী ফার্নিচারের ব্যবস্থাপক মো. হোসেন আলী বলেন, 'বাঁশ এখনো বাংলাদেশে ব্যাপক পরিমাণে উৎপাদিত হয় কিন্তু বেত প্রায় বিলুপ্তির পথে। সেজন্য বেতকে সংরক্ষণ করা উচিত।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, 'তাদের যদি স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হয় তাহলে আমার বিশ্বাস এই ইন্ডাস্ট্রি আবার ঘুরে দাড়াবে এবং আমাদের কর্মসংস্থান যে অভাব আছে সেটা কিছুটা হলেও পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।'
দেশি ৯টি প্রজাতির মধ্যে রাজশাহীতে পাওয়া যায় তিন ধরনের বেত। যা ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর আমদানি করা প্রতিকেজি মোটা বেতের দাম ২৫০ টাকা।