একসময় চকলেট ছিল খুবই তিতা স্বাদের। চকলেটের উৎপত্তি প্রায় ৪ হাজার বছরের পুরনো। তবে ৪ হাজার বছর আগের চকলেট আর আজকের চকলেটের মধ্যে অনেক তফাৎ। আমাজন উপত্যকার কোকো গাছের ফল থেকে আসে চকলেট। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোকোর বীজ মেক্সিকোর মায়া সভ্যতায় অভিজাত শ্রেণিরা পানীয় হিসেবে ব্যবহার করতো।
কিভাবে আমাজন উপত্যকার কোকো উদ্ভিদ রূপান্তরিত হয়ে আজকের কিটক্যাট আর ডেইরি মিল্কে রূপ নিলো…? জেনে নিবো সেই মজার গল্প…
খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ অব্দে অ্যাজটেকরা কোকোর বীজ ব্যবহার করেছিল অন্যভাবে। তারা পণ্য কেনার জন্য বিনিময় মুদ্রা হিসেবে কোকোর বীজ ব্যবহার করতো। তারা কোকো গাছকে স্বর্গের গাছ বলে মনে করতো। যুগ যুগ ধরে তারা কোকো বীজকে বিনিময় মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করেছে।
১৪৯২ সালে কলম্বাস স্পেন আবিষ্কারের পর সেখানে কোকো বীজ আবিষ্কার করেন। ১৫০২ সালে কলম্বাস দেখেন নিকারাগুয়ার আদিবাসী জনগোষ্ঠী কোকোর বীজ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করছে। তখন পর্যন্ত ইতালি ও ভারতবর্ষে কোকো একটি অপরিচিত বস্তু ছিল।
এর প্রায় ১৫ বছর পর ইউরোপীয় বণিক ও আবিষ্কারকরা মায়া ও অ্যাজটেকদের মত পানীয় হিসেবে চকলেট পান করা শুরু করলো। ১৫১৯ সালের দিকে হার্নান কোর্টেজ নামে একজন আবিষ্কারক কোকোর বাণিজ্যিক দিক আবিষ্কার করলেন।
১৫২৮ সালে কোর্টেজ রাজা পঞ্চম চার্লসের প্রাসাদে চিনিযুক্ত কোকো পানীয় পরিবেশন করেন। ১৫৮৫ সালের দিকে প্রথম বানিজ্যিকভাবে স্পেনের খোলা বাজারে কোকো বিক্রি হয়। ১৬৪৩ সালের দিকে স্প্যানিশ রাজকুমারী মারিয়া থেরেসা তার হবু স্বামীকে চকলেট উপহার দেন। এভাবেই চকলেটের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
১৮২৪ সালে অ্যান্টনি মেনিয়ার নামে এক ফরাসি উদ্যোক্তা প্রথম চকলেট কারখানা স্থাপন করেন। ১৮২৮ সালে কোনার্ড জে. ভেন হটেন নামে একজন কেমিস্ট তার চকলেট পাউডারের স্বত্ব নিবন্ধন করেন। ১৮৪৭ সালে চকলেট ট্যাবলেট বাজারজাত করা হয়। তবে তা ছিল তিতকুটে স্বাদের। ১৮৬৯ সালের দিকে দ্য মেনিয়ার চকলেট ফ্যাক্টরি ৩৮৫০ টন চকলেট উৎপাদন করেন।
১৯ শতকের মাঝামাঝি থেকে বিশ্বব্যাপী চকলেটের বাজার প্রসার পেতে থাকে। ১৮৭৪ সালে বিখ্যাত সুইস চকলেট প্রস্তুতকারক ড্যানিয়েল পিটার দুধ ও চকলেটের মিশ্রণে এক ভিন্ন স্বাদের চকলেট তৈরি করেন। এর ফলে চকলেটের স্বাদ বেড়ে যায় বহুগুণ। বলা যায়, আধুনিক চকলেটের শুরু এভাবেই। নেসলে, ক্যাডবেরি ও ডেইরি মিল্ক প্রতিষ্ঠার পর চকলেট সবার কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ভিন্নস্বাদের এই চকলেট সবশ্রেণীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়।
I am not black, I am chocolate color, আমি কালো নই, আমি চকলেট কালার। মজা করে আমরা এই কথাটি প্রায়ই বলে থাকি। কারণ চকলেট নামটার মধ্যেই একটা চিত্তাকর্ষক ব্যাপার আছে। শিশুরা চকলেট প্রিয় হয় বেশি। তবে নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে চকলেটের জনপ্রিয়তার কমতি নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষের চেয়ে নারীরা চকলেট পছন্দ করে বেশি।
বর্তমানে ক্রিসমাস ডে, বিয়ে, উৎসব কিংবা উপহার চকলেট ছাড়া অপূর্ণ। চকলেট বার ছাড়াও চকলেটের বহুমুখী ব্যবহার হয়েছে। চকলেট দিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করা হয়। কেক, আইসক্রিম, কফি কিংবা বিস্কুটে চকলেটের ব্যবহার স্বাদে ভিন্নতা আনে। শুধু কেক কিংবা বিস্কুটে নয়, চকলেট ব্যবহার হয় ফুচকা কিংবা প্রসাধনীতেও।
চকলেটের এবং রোমান্স দুটি শব্দ যেন একে অন্যের পরিপূরক। হার্টশেপ চকলেট ভালোবাসার প্রতীক। ভালোবেসে প্রিয়জনকে উপহার দিতে পারেন চকলেট।