লোহিত সাগরে অস্থিরতায় কার্গো বিমানে পণ্য ক্রেতাদের নতুন আবদার। পণ্য চান কার্গো বিমানে। ব্যয়বহুল হওয়ায় বাধ্য হয়ে বেশি খরচে 'লিড টাইমে' পণ্য পৌঁছানোর চাপ বাড়ছে নতুন সমুদ্রপথে। অন্যদিকে প্রাপ্তির নিশ্চয়তায় বাড়তি খরচে ইউরোপের ক্রেতারা ঝুঁকছেন তৃতীয় দেশে, তাতে বাংলাদেশ হারাতে যাচ্ছে রপ্তানির ক্রয়াদেশ। পরিস্থিতি সামলাতে রপ্তানির নতুন গন্তব্য খোঁজার তাগিদ বিশ্লেষকদের।
'লিড টাইম' হলো পণ্য রপ্তানির ক্রয়াদেশের পর পণ্যটি আমদানিকারকের হাতে পৌঁছাবে তার নির্ধারিত সময়। এই সময়ের ওপর কেন্দ্র করে চলে পুরো বিশ্বের উৎপাদন থেকে খুচরা বাজারের কেনাবেচা সরবরাহ বৃহৎ বা খুচরা বানিজ্য। উৎপাদনকারী পণ্য রপ্তানিতে অসমর্থ হলে সেটি ছাড়কৃত পণ্যে বিক্রি করা হয়। ফলে একদফা ক্ষতির মুখে পড়েন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। অথবা নামমাত্র মূল্যে চলে যায় স্থানীয় খোলা বাজারে।
এই পুরো ক্রয়াদেশে উৎপাদন ছাড়াও যেটি জড়িত তা হলো বীমা ও পরিবহন খরচ। সেটি যত নিরাপদ হবে ততই লাভের অংশ দেখবেন উৎপাদক। কিন্তু লোহিত সাগরের অস্থিরতায় হাওয়া লেগে ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রপ্তানি শিল্প।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, 'বায়াররা বলছে যেহেতু আগে যে চার্জ ছিল তা বাড়ার কারণে তারা আমাদের এফওবিতে এডজাস্ট করতে বলছে। কারণ তারা তো আমাদের থেকে পণ্য নিয়ে তাদের দেশে বিক্রি করবে। সেলিং প্রাইজ তো আর বাড়ানো যাচ্ছে না। বিক্রি মূল্য যদি বাড়াতে না পারে তাহলে যত খরচ বাড়বে সব খরচ কিন্তু রপ্তানিকারকের উপর চলে আসবে।'
বাংলাদেশের পোশাকখাত এখনও ইউরোপমুখী। পোশাকের কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানি রুট লোহিত সাগর, সুয়েজ খাল, ভূমধ্যসাগর। লোহিত সাগরের অস্থিরতায় জাহাজের নতুন রুট জিব্রাল্টার রুট। এতে পণ্য পৌঁছাতে সময় বাড়বে ১০ দিন। বাড়বে জ্বালানি ও বীমা খরচ। এমন পরিস্থিতিতে লিড টাইমে পণ্য পেতে কার্গো বিমানে পণ্যের আবদার ক্রেতাদের।
বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'আগে এক সপ্তাহ বা ১০ দিন দেরি হলেও তারা আমাদের সময় দিত। এখন আর সে সময় দিচ্ছে না। কারণ ১০ থেকে ১২ দিন তার অতিরিক্ত সময় লেগে যাচ্ছে এই দিকে ঘুরে যাওয়ার কারণে। ফলে সেসময় তারা আমাদের আর দিচ্ছে না। তারা আমাদের কার্গো বিমানে পণ্য দেয়ার জন্য বাধ্য করছে। এটা আমাদের জন্য অনেক খরচের বিষয়।'
এরইমধ্যে আমদানি নির্ভরতায় ব্যয় বেড়েছে। জ্বালানি আর লোহিত সাগর এখন বিজিএমইএ'র প্রতিদিনের টেবিলে আলোচনার বিষয়। পোশাক মালিকরা জানায়, পণ্যের বাড়তি পরিবহন ব্যয় দিতে ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন নতুন দেশে।
বিশ্ব বানিজ্য নিয়ন্ত্রকরা বলছেন, ভূ-রাজনীতির এই অস্থিরতা ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে বিশ্ববাজারে। তাই জলে শান্তি ফেরাতে জাতিসংঘকেই শান্তির দূতের ভূমিকায় ফিরতে হবে।
গবেষকরা বলছেন, ভূ রাজনীতির দূরভিসন্ধিতে খুব দ্রুত শান্ত হবার লক্ষণ নেই লোহিত সাগর। ফলে দেশের আর্থিক বাজারের পরিস্থিতিও অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে আশংকা বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিশ্লেষকদের।