বছরের শুরুতে আবাসন খাতের নির্মাণসামগ্রীর মূল্য অস্থির হয়ে পড়েছে। জানুয়ারি মাসে ৪ দফায় প্রায় দুই হাজার টাকা বেড়েছে সব ধরনের রডের দাম।
মূলত করোনার পর, ২০২১ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে রডের কাঁচামালের দাম বাড়তে থাকে। এরসাথে যোগ হয়েছে ডলার সংকট, টাকার অবমূল্যায়ন ও জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি। ২০২০ সালে দেশে ৬০ গ্রেডের রডের দাম ছিল ৫৮ হাজার টাকা। ২০২১ সালের ২১ হাজার টাকা বেড়ে ৭৯ হাজার টাকায় ঠেকে রডের দাম।
২০২২ সালে সবোর্চ্চ ৯১ হাজার এবং ২০২৩ সালের মার্চে রেকর্ড প্রায় লাখ টাকায় বিক্রি হয় রড। এরপর কয়েক হাজার টাকা কমে প্রতিটন রড ৯০ থেকে ৯১ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এখন আবারও দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৪ থেকে ৯৬ হাজার টাকায়।
রড বিক্রেতা ওবায়দুল করিম বলেন, 'এমনিতে রডের দাম কম থাকলে কেউ কিনতে চায় না। কোম্পানি যদি ৫শ' থেকে ১ হাজার টাকা এদিক সেদিক করে তাহলে বিক্রি বেড়ে যায়। খুচরা বিক্রেতারা তখন বেশি করে কিনতে চায়।'
কারখানার মালিকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে রড তৈরির কাঁচামাল লোহার টুকরো বা স্ক্র্যাপের দাম বেড়েছে প্রতি টনে ২০ থেকে ২৫ ডলার। বেড়েছে রাসায়নিকের দামও। সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক ডলারের উচ্চ মূল্যে আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক।
জিপিএইচ ইস্পাতের হেড অফ ফ্যাসিলিটি এন্ড এস্টেট এবিএম শাহেদুল আলম মাসুদ বলেন, 'কাঁচামাল কিনে আনার সময় প্রতিদিন দামের তারতম্য থাকে। আগে স্ক্র্যাপ ৪০০ ডলারে কিনতাম, এখন সেইটা ৪২৫ থেকে ৪৩০ ডলারে কিনতে হয়।'
এছাড়া চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট, হুতি বিদ্রোহীদের হামলার কারণে জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি ও কাঁচামাল আমদানিতে সময় বেশি লাগায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে বলে দাবি রড নির্মাতাদের।
কেএসআরএম স্টিল লিমিটিডের পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন, 'সবকিছুর খরচ পণ্যের উপর পড়ে, সেক্ষেত্রে দাম বেড়ে যায়। এবং এটা শুরু হয়েছে গত মাসের লোহিত সাগর হামলা থেকে। ধীরে ধীরে ডলারের দাম বাড়ছে। এরসাথে আবার গ্যাসের সমস্যা যোগ হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে পণ্যের দাম প্রায় ২ হাজার টাকা বেড়েছে।'
একইসাথে গত ৩ বছরে বৈদ্যুতিক তারের দাম বেড়েছে ৯১ শতাংশ। ২০২০ সালে ১.৫ আর.এম বৈদ্যুতিক তারের ইউনিটপ্রতি দাম ছিল ১ হাজার ৫৪২ টাকা, তা এখন ১ হাজার ৪০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯৪২ টাকায়।
সিমেন্ট, বালু, রংসহ সব ধরণের নির্মান সামগ্রীর দাম বেড়েছে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত । এতে নির্দিষ্ট বাজেটে ফ্ল্যাটের কাজ শেষ করা আবাসন শিল্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়ছে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ব্যয়ও।
দেশে রড সিমেন্টসহ বেশ কিছু নির্মান সামগ্রীর চাহিদার প্রায় শতভাগই উৎপাদন করছে দেশিয় প্রতিষ্ঠান, তবে কাঁচামাল আমদানি নির্ভর হওয়ায় অস্থির হচ্ছে বাজার।





