কৃষি , গ্রামীণ কৃষি
দেশে এখন
0

সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের

ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে দেশে বাড়ছে তেলবীজের আবাদ। সয়াবিন তেলের তুলনায় কম কোলস্টেরল এবং সহজেই চাষ উপযোগী হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষে বেশ আগ্রহী কৃষকরা।

চলতি মৌসুমে পুনর্বাসন প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে চ্যাম্প ও হাইসান-৩৬ হাইব্রিড জাতের বীজ বিতরণ করা হয়। চাষিরা বলছেন, অতিবৃষ্টি এবং পরপর দুইটি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সঠিক সময়ে সূর্যমুখীর বীজবপনে তারা বাধাগ্রস্ত হন।  এতে বেশ ক্ষতির সম্মুখীনও হয়েছেন অনেকে। তবে ফলন ভালো হলে ঘাটতি পোষানো সম্ভব।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান স্বল্পমেয়াদী, খরা ও লবণাক্ত মাটি সহনশীল তেল জাতীয় ফসল সূর্যমুখী। লাভজনক হওয়ায় কুমিল্লায় ৮৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে সূর্যমুখীর। এবার ফলনও বেশ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এক সূর্যমুখী চাষি বলেন, 'গতবছরের তুলনায় ফুলের পরিমাণ বেড়েছে কিন্তু ফুল থেকে যে তেলটা আমরা বের করি সেটার পরিমাণ একটু কমেছে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, 'স্বাস্থ্যসম্মত তেল উৎপাদনের জন্য আমরা কৃষকদেরকে সূর্যমুখী তেল আবাদে উদ্বুদ্ধ করছি। সে লক্ষ্যেই সরকার সূর্যমুখীকে প্রণোদনার আওতায় এনেছে। কুমিল্লা জেলায় প্রায় ৮৮ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে।'  

ফরিদপুরে সরিষার তেলের দাম বাড়ায় বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখী তেল জনপ্রিয় হচ্ছে। একদিকে স্বল্প খরচ ও অন্যদিকে অল্প সময়ে ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকের আগ্রহের কেন্দ্রে ফসলটি।

জেলার নয়টি উপজেলায় দুইশরও বেশি কৃষক চলতি মৌসুমে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে দর্শনার্থীরাও আসছেন।

দর্শনার্থীরা বলেন, 'সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পরিবারসহ এখানে এসেছি। প্রতিদিন এখানে শত শত দর্শনার্থী ভিড় করছে।'

সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন দর্শণার্থীরা

তেলটি কোলেস্টেরল মুক্ত ও প্রচুর পরিমাণে শক্তির উপকরণ থাকায় শরীরের দুর্বলতা কমিয়ে কার্যক্ষমতা বাড়াতে অনন্য ভূমিকা পালন করে বলে জানান ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম। বলেন, 'সূর্যমুখী তেল সারা বিশ্বের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এই তেলটা মানুষের হার্টের জন্য উপকারী।'

এদিকে মেহেরপুর সদর উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে সাড়ে ৭ একর জমিতে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী। খামারের সৌন্দর্যের কিছু ছবি ও ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। তাই বাড়ছে দর্শনার্থীর উপস্থিতি।

দর্শনার্থীরা বলেন, 'এখানে খুবই ভালো লাগছে। ফুলগাছ দেখলাম ছবি তুললাম, খুবই মজা করেছি।'

এ বছর খামারে সাড়ে ৭ একর ও কৃষক পর্যায়ে সাড়ে ৮ একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়ছে ৫ টন। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা।

মেহেরপুর ডাল ও তেল বীজ উৎপাদন খামারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. ইকবাল হোসন বলেন, 'এখানে দুটি উপায়ে চাষ করা হয়। একটা হলো খামারে আর অন্যটি বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে। চুক্তিবদ্ধ চাষিদের মাধ্যমে চাষাবাদ করে থাকি।'

নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে সূর্যমুখীর বীজবপন করা হয়। বপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও সেচ লাগে দুবার। প্রতি একর জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।