ভ্রমণ
দেশে এখন
0

পিছিয়ে উত্তরের পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতি

মৌর্য্য, গুপ্ত, পাল রাজাদের শাসনামল শুধু নয়, আছে-বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ প্রাচীন আমলের স্মৃতি বিজড়িত অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বগুড়া ও আশেপাশের জেলাগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব প্রত্নস্থলে পর্যটক টানতে নেই পরিকল্পিত আয়োজন।

ভারতীয় উপমহাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জ্ঞানবিজ্ঞান, শিল্প-সংস্কৃতি আর ধর্মীয় সহনশীলতার প্রকৃষ্ট ঐতিহ্যের অংশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এশিয়ার বৃহত্তম প্রাচীন বৌদ্ধবিহারটি নওগাঁর পাহাড়পুরে অবস্থিত। নওগাঁজুড়ে এমন অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও পর্যটনে এখনো পিছিয়ে।

নওগাঁ উদীচীর সহ-সভাপতি মহসিন রেজা বলেন, 'এই প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনগুলো শুধু দেশি পর্যটক নয় আন্তর্জাতিক পর্যটনও আকর্ষণ করার সক্ষমতা রাখে।'

একুশে পরিষদের সভাপতি ডিএম আব্দুল বারী বলেন, 'এই পুরাকীর্তিগুলোকে সংরক্ষণ এবং এটা যাতে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় এই মর্মে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণে এটা বিরাট ভূমিকা রাখবে।'

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে একদল পর্যটক

এদিকে পাশের জেলা বগুড়াতেও অনেক প্রাচীন-নিদর্শন রয়েছে। আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগর, পুন্ড্র বর্ধনের রাজধানী। যেখানে ধ্বংসাবশেষের ভাঁজে ভাঁজে প্রাচীন সভ্যতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এমনিভাবে নাটোরের গণ ভবনের মতো রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও জয়পুরহাটের সবগুলো

ঐতিহাসিক নিদর্শন ঘিরে প্যাকেজের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট বাস ও গাইড চালুর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতি চাঙ্গা হবার পাশাপাশি দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে এ অঞ্চলের ইতিহাস-ঐতিহ্য পৌঁছানো যাবে।

মহসিন রেজা আরও বলেন, 'আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটার ব্যাপক প্রচার করা দরকার এবং এটাকে প্যাকেজ প্রোগ্রাম হিসেবে মানুষের কাছে তোলে ধরা দরকার বলে মনে করি।'

দিবস কেন্দ্রিক ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বগুড়ার মহাস্থানগড় ও আশেপাশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোতে বিভিন্ন এলাকার দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় থাকে। তবে নিরাপত্তা, যোগাযোগ, আবাসন, খাবারসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা গেলে আরও বেশি দর্শনার্থী টানা সম্ভব হবে।

গণমাধ্যমকর্মী আব্দুর রউফ রুবেল বলেন, 'সরকার যদি এটাকে আরও ঢেলে সাজায় তাহলে মানুষকে ব্যাপকহারে টিকেট কেটে আসবে। তাদের নিরাপত্তা এবং থাকার ব্যবস্থা করতে হবে।'

বগুড়ার মহাস্থানগড়সহ এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের বিকাশে নিজেদের বিভিন্ন পরিকল্পনার সাজানো হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

আড়াই হাজার বছরের পুরাতন পুন্ড্র বর্ধনের রাজধানী

বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা একটা সমন্বিত প্রস্তাব দিবো যাতে করে মহাস্থানগড়ে বৃহত্তর আকারে একটা পর্যটনকেন্দ্র তৈরি হয়। আমাদের আরও কতটুকু জমি লাগবে সেটার পরিকল্পনা করবো।'

রংপুর-রাজশাহী প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানা বলেন, 'বড় পরিসরে যাতে স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা যায়, পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে পরিদর্শন করতে পারেন। সেই সুযোগগুলো সৃষ্টি করা হবে।'

গাইবান্ধার বিরাট রাজার ঢিবিসহ খনন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও গাইবান্ধার এসব প্রত্নস্থলকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে ট্যুরিস্ট বাস, গাইডসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে পর্যটকদের ভ্রমন যেমন সহজ হবে, তেমনি বিকশিত হবে পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতি।