ফ্লোর প্রাইস থাকায় এতদিন বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর টাকা ফ্লোরে আটকে ছিল। যার কারণে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে, নতুন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে পারছিলেন না অনেকেই। ফলে দামের নিম্নসীমা তুলে দেয়ায় পুঁজিবাজারে লেনদেন বেড়েছে। ৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা লেনদেন হয় গত মঙ্গলবার।
বাজার গতিশীল হওয়ায় অনেক বিনিয়োগকারী আশায় বুক বেঁধেছেন। ব্রোকারেজ হাউজগুলোতেও ভিড় বেড়েছে। অনেক বিনিয়োগকারী মনে করছেন বাজারে ফেরার এখনই সময়।
বিনিয়োগকারীরা বলেন, 'এখন নতুন বিনিয়োগকারীদের বাজারে আসার সুন্দর একটা সময়। কারণ বাজারে মনে হয় না এখন কেউ লোকসানের মুখে থাকবে। অর্থ বিক্রি এবং উত্তোলন কোনটাই করতে পারছিলাম না। একটা সংকটের মধ্যে ছিলাম। এটা থেকে মুক্তি পেয়েছি।'
এ অবস্থায় বাকি ১২টি প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইসও তুলে দেয়ার দাবি বিনিয়োগকারীদের।
তারা আরও বলেন, 'ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিয়ে এখানে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করা উচিত। তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে। আমরা ভালো কোম্পানি আসুক। ফ্লোর প্রাইসের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ তো আসছে না। পৃথিবীর কোথাও তো ফ্লোর প্রাইস নাই। সরকার হয়তো কম সময়ের জন্য বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে ফ্লোর প্রাইস দিয়ে রেখেছিল। কিন্তু প্রায় দুই বছর সরকার এটাতে তাদের টাকা আটকে রেখেছে।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ফ্লোর প্রাইস সাময়িক সময়ের জন্য ভালো হলেও দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়। বরং তা না থাকলেই বাজার আবারও চাঙা হয়ে উঠবে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, 'কেউ বিক্রি করার জন্য আসবে আবার কেউ বিক্রিত অর্থ দিয়ে নতুন করে কিনবে। যেটা গত দেড় বছরে সম্ভব হয়নি। কারণ বিক্রি না করতে পারলে কিনবে কিভাবে। বাজার যখন সবগুলো খোলা হয়েছে তাই ওগুলো বেঁধে রাখার কোন কারণ নাই। কারণ বিপুল সংখ্যক মানুষের টাকা তিন-চারটা শেয়ারে আটকে আছে। কত দামে বা লোকসানে বিক্রি করবে এটা বিনিয়োগকারীর সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।'
এদিকে সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবস বুধ ও বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচকের পতন হয়েছে। বুধবার লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ালেও বৃহস্পতিবার লেনদেন হয় ৮৭০ কোটি টাকা। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন- ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ায় বিক্রির চাপ থাকায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। পাশাপাশি কমেছে মূল্যসূচক।
তবে বাজারের এমন পতনকে সাময়িক বলছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সহ সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী। বলেন, 'আমাদের এখানে এই মূহুর্তে মার্কেটের যে ১১০০ থেকে ১২০০ কোটি টাকার লেনদেন, এটা স্বাভাবিক লেনদেন। যদি ফ্লোর প্রাইসটা না থাকতো তাহলে এইরকমই লেনদেন হতো। আজকে ৪৫ পয়েন্টস পড়ে গেছে, হয়তো শেষের দিকে কিছুটা পূরণ হবে।'
ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহে ফ্লোর প্রাইস পূর্ণ কার্যকর থাকা অবস্থায় লেনদেন হয়েছিলো প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।