পরমাণু যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ কিমের

0

দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বীপ লক্ষ্য করে এবার শত শত বোমা ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মহড়া শেষের পরপরই এই বোমা ছুড়ে পিয়ংইয়ং। এই কার্যক্রমকে উস্কানিমূলক বলছে সিউল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির পর যেকোন সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় পরমাণু হামলা করে বসতে পারে উত্তর কোরিয়া।

কোরিয় সীমান্তে এক সপ্তাহ ধরে চলেছে দক্ষিণ কোরিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া। অংশ নেয় দুই দেশের সেনাবাহিনী আর যুদ্ধযান। এই মহড়া শেষ হয় বৃহস্পতিবার। চটে গিয়ে শুক্রবার দুই দেশের সীমান্ত সংলগ্ন দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়েওনপিয়েওং দ্বীপ লক্ষ্য করে পশ্চিম উপকূল থেকে ২০০ রাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে উত্তর কোরিয়া। সঙ্গে সঙ্গে দ্বীপ থেকে সাধারণ মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সিউল। বোমাগুলো উত্তর কোরিয়ার উত্তর সীমায় ভূপাতিত হয়, যেটা উত্তর আর দক্ষিণ কোরিয়ার সমুদ্র সীমানা।

দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ লি সাং জুন বলেন, জাংসান কেপ থেকে ২০০ আর্টিলারি শেল ছুড়েছে তারা। তবে সাধারণ মানুষ আর সেনাবাহিনীর সদস্যদের কোন ক্ষতি হয়নি। উত্তর কোরিয়াকে সাবধান করছি, এই অঞ্চলে যেকোন ধরনের অস্থিরতা তৈরির জন্য তারাই দায়ী খাকবে। উত্তর কোরিয়া উস্কানিমূলক কাজ করলে আমরাও ব্যবস্থা নেয়া শুরু করবো।

২ হাজার বাসিন্দার আবাস আর দক্ষিণ কোরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটির অবস্থান এই দ্বীপে। দ্বীপটি পীত সাগরে দুই দেশের সমুদ্রসীমা থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে আর উত্তর কোরিয়ার উপখূল থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সিউল বলছে, এই ধরণের কার্যক্রম স্পষ্টত উস্কানিমূলক।

শুক্রবারই নিজ দেশের সেনাবাহিনীকে যেকোন সামরিক কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পরমাণু যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে কৌশলগত যুদ্ধযান আর সমরাস্ত্র তৈরি করা প্রয়োজন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কের বৈরিতার কারণে এক দেশ অন্য দেশকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করছে। কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির কারণে ভবিষ্যতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে উত্তর কোরিয়া। সম্পর্ক স্থিতিশীল করার পরিবর্তে উল্টো কিম জং উন নির্দেশ দিয়েছেন, যে কোন সংকট মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে।

ইউনিভার্সিসি অব নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ইয়াং মু-জিন বলেন, এখন পর্যন্ত কোন পরমাণু অস্ত্র দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে উত্তর কোরিয়া ব্যবহার করেনি। উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মতো দুই কোরিয়া দেশের সম্পর্ককে দেখতে শুরু করেছে পিয়ংইয়ং। উত্তর কোরিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এখন কোরিয় উপদ্বীপের শান্তি। যেকোন শত্রু দেশের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত উত্তর কোরিয়া। এখন যেই অস্থিরতা তৈরি হবে, অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় সেটা ভয়াবহ।

কোরিয় যুদ্ধের অবসানের পর থেকে দুই দেশই একে অন্যকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করে। আন্তঃকোরিয় সম্পর্কে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়, আস্থা রাখায় হয় বিশেষ এজেন্সি আর মন্ত্রীদের ওপর। ধারণা করা হয় এক দেশ চলছে দুই সিস্টেমে। কিন্তু সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে বেশ নড়েচড়ে বসেছে দক্ষিণ কোরিয়া। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে কোন পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করেনি উত্তর কোরিয়া। কিন্তু বর্তমানে সিউলকে ভিন্ন দেশ আর শত্রু হিসেবেই বিবেচনা করছে পিয়ংইয়ং। সেক্ষেত্রে যেকোন সময় এই অঞ্চলে শুরু হতে পারে যুদ্ধ। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।