প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতা, সভ্যতার প্রাণ নদীর বৈচিত্রতা কিংবা পূন্যভুমির পরিচিতি পাওয়া এ জেলা তাই সবসময় রাজনীতির মাঠে আলোচনার শীর্ষে। সারাদেশের মতো নির্বাচনী হাওয়া বইছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেট অঞ্চলেও।
কথিত আছে, সিলেট- ১ আসনে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হয়, সে দলই সরকার গঠন করে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত তাই হয়ে আসছে। তাই এবারের নির্বাচনেও সিলেট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এ অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ৩৯ লাখ। যার মধ্যে ভোটার আছেন ২৭ লাখের বেশি।
৩ হাজার ৪৫২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সিলেট জেলায় ১৩টি উপজেলা, ৪টি পৌরসভা আর ১টি সিটি কর্পোরেশন নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ৬টি। জেলায় মোট ভোটারের ১৮ শতাংশই হচ্ছেন তরুণ বা যুবক। যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর। ভোটের মাঠে তরুণ ভোটারই ফ্যাক্টর হতে পারেন প্রার্থী নির্বাচনে।
নগরীর তরুণদের আড্ডাতেও এখন আলোচনা আগামী নির্বাচন নিয়ে। বলছিলেন, নির্বাচনে এমন প্রার্থী বিজয়ী হোক যিনি সিলেট অঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি বা কর্মসংস্থানের জন্য উদ্যোগী হবেন।
তরুনরা জানান, যারা নির্বাচিত হবেন তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, নতুন প্রজন্ম যে কাজ করবে তাদের সে কাজের ক্ষেত্র যেন ভাল করে তৈরি করা হয়। এবং নতুন প্রজন্ম বিদেশমুখি না হয়ে, দেশের জন্য কাজ করে সে ব্যবস্থা গড়ে দেয়া। ছেলে-মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার জায়গা গড়ে দেয়া।
সিলেট সদর উপজেলার কৃষক নজরুল ও হবিবুর। একজনের বয়স ২৭ আর আরেকজনের ৪১ এর বেশি। তাদের বয়সী সিলেট জেলায় এবার ভোটার আছেন ৮ লাখ ২৫ হাজার ৬০৫ জন। যা মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ। তাদের চাওয়া, এ অঞ্চলের কৃষি উৎপাদনে ব্যবহৃত পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং জীবন মান সহজীকরণের প্রতিশ্রুতি।
তারা বলেন, 'আগে আমাদের যে জমি চাষ করতে ২ হাজার টাকা লাগত এখন তা ৫ হাজার টাকা লাগে। বীজ, সারের দাম যেন কম করা হয় আমরা সেটা চাই।'
সিলেটে ভোটারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ প্রবাসী। বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর, বিয়ানীবাজারসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার বাসিন্দাদের চাওয়া, স্থানীয় সড়কের উন্নয়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের পরিবর্তন। পেশাগত ভিন্নতায় এসব ভোটারের চাওয়া পাওয়াও ভিন্ন।

সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ভোটার ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী। সংখ্যায় যা ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৩৮ জন। যা মোট ভোটারের ৪২ শতাংশ। গ্রাম্য হাট বা বিকেলের অবসরে চায়ের আড্ডায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব বয়সী মানুষের মুখেও এখন নির্বাচনী আলাপ। অভিভাবক সমতুল্য এসব ভোটারদের কাছে আবার অবকাঠামোগত উন্নয়নের চেয়ে জীবন বাঁচানোর উপকরণের দাম কমার আকুতি বেশি।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব শ্রেণি পেশার ভোটারদেরই প্রত্যাশা নির্বাচনী আনন্দসম্ভারে সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি যে সব প্রার্থী স্থানীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তাসহ অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন তাদের পক্ষেই ভোটের রায় দিবেন তারা।