জেলার গৌরীপুরে আবাদ করা আলুর বেশিরভাগই স্থানীয় জাতের। চল্লিশা থেকে বাছাই করে বার্মিজ নামের আরও একটি স্থানীয় জাত উদ্ভাবন করেছেন স্থানীয়রা। মূলত এই দুই জাতের আলুই চাষ হয় এ অঞ্চলে। প্রতিবছর অর্থকরী এ ফসলটি থেকে মোটা অংকের লাভ করেন কৃষকরা।
কিন্তু এবার আলুর আবাদ করে ব্যাপক ক্ষতির মুখে চাষিরা। বৈরী আবহাওয়ায় ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই গোড়া পচে, গাছের পাতা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে গাছ। ফসল ধরার সময়ই এ প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
চুরালী গ্রামের কৃষক আশেদ আলী। স্থানীয় জাতের চল্লিশা ও বার্মিজ আলু ১০ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন। এতে তার লাখ টাকার ওপরে খরচ হয়েছে।। স্বাভাবিক ফলন হলে তার কমপক্ষে দেড়শ’ মণ আলু উৎপাদন হতো। কিন্তু ছত্রাকের আক্রমণে গাছ শুকিয়ে যাওয়ায় এখন উৎপাদন হতে পারে ২০-৩০ মণ। অন্য চাষিদের একই অবস্থা। ফলন বিপর্যয়ে চলতি বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।
কৃষক আশেদ আলী বলেন, 'আউশ আর বোরো গিরস্তির ওপরে আমাদের পরিবার নির্ভর করে। এখন হাতের সব শেষ, ঋণও হইসে, আমরা সর্বহারা।'
অন্য চাষিরা বলেন, '২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকার ওষুধ দিসি ১০ কাঠা জমিতে। কোন কাজই হয় নাই, আলু মাটির সাথে মিশা গেসে। ওষুধ দিলে আরও ক্ষতি বেশি হইসে।'
নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগেও কার্যকর ফল পাননি কৃষকরা। এতে বাজার থেকে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে মান পরীক্ষার দাবি তাদের।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, 'যা হইছিল জন্মের পরেই সব মারা গেছে। ওষুধ দিয়া তো এখন সব পঙ্গু হইয়া গেছে। এইডাই মূল ফসল, এইডার উপার্জন দিয়া এলাকার মানুষ চলে।'
এদিকে চাষিদের সাথে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। মৌসুমের শুরুতে বাড়ন্ত আলুগাছ দেখে ক্ষেতের আলু কিনে নেন ব্যবসায়ীরা। এখন তারাও চোখে অন্ধকার দেখছেন।
লেইট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়ে পচে যাওয়া আলু গাছ
ব্যবসায়ীরা বলেন, 'প্রতি কাঠাতে ৩ থেকে ৫ মণ আলু মিলতেছে। কিন্তু আলু পাওয়ার কথা ১৫ থেকে ১৮ মণ। প্রত্যেক বেপারি লসের মধ্যে আছে। কৃষকও লাভের মধ্যে নাই।'
শুধুমাত্র গৌরীপুর উপজেলাতেই দেড়শ’ হেক্টর জমিতে লেট ব্লাইট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, একমাস আগের গুড়িগুড়ি বৃষ্টি এবং চলমান ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে আলুতে লেট ব্লাইট বা মড়ক রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
গৌরীপুরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র সরকার বলেন, 'আমরা নতুন ওষুধগুলো কৃষকের মাঝে প্রেসক্রিপশন করার চেষ্টা করছি। সেগুলো সহজলভ্য করার জন্য স্থানীয় বাজারগুলোতে পরামর্শ দিচ্ছি।'
উদ্ভিদ রোগতত্ত্ববিদদের পরামর্শ ছত্রাকের আক্রমণ শুরুর আগেই প্রতিরোধমূলক ওষুধ প্রয়োগের। সংক্রমণ ছড়িয়ে গেলে ওষুধ প্রয়োগে তেমন ফল পাওয়া যায় না বলেও জানান তারা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. রসিদুল ইসলাম বলেন, 'কৃষকরা কোন সময় স্প্রে করবে যদি তার একটা পূর্বাভাস দেয়া যায় তাহলে তারা শতভাগ সফল হবে বলে বিশ্বাস করি। তাদের মোবাইলে মেসেজ দিয়ে যদি আগে থেকেই বলে দেয়া যায়।'
ময়মনসিংহ জেলায় এ বছর ৩ হাজার ৫১৭ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে কী পরিমাণ জমির আলু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার সঠিক কোন হিসেব কৃষি বিভাগের কাছে নেই।