হবিগঞ্জে হাওর জুড়ে এরই মধ্যে বোরো আবাদ শেষ। এখন নন-হাওর এলাকাগুলোতে পুরোদমে বোরো আবাদ শুরু হয়েছে।
হাওরের কৃষকরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর নির্বিঘ্নে বোরো আবাদ সম্ভব হয়েছে। যে কারণে জানুয়ারির শুরুতেই হাওরে বোরো আবাদ পুরোপুরি শেষ করতে পেরেছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, এবার হবিগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে পুরোপুরি শেষ হলে আবাদ লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যাবে।
হবিগঞ্জে মূলত তিন ধরনের ধান আবাদ হয়ে থাকে। তার মধ্যে ৫০ হাজার ৮৮৫ হেক্টর হাইব্রিড, উফসী জাতের ৭২ হাজার ৮০১ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হবে ৫০ হেক্টর জমিতে।
জেলার আজমিরিগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই ও নবীগঞ্জ উপজেলার আংশিক মূলত হাওর অঞ্চল। বানিয়াচংয়ের দুইটি হাওর ঘুরে দেখা যায়, মৌসুমের শুরুতে আবাদ করা ধানের চারা অনেকটা পরিপক্ব হয়ে উঠেছে।
দক্ষিণা বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ ধানগাছ। বাম্পার ফলনের আশায় হাওর জুড়ে জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ জমিতে সেচ দিচ্ছেন, কেউ আগাছা পরিষ্কার করছেন আবার কেউ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন।
বানিয়াচং উপজেলার কালারডুবা হাওরের কৃষক অনু মিয়া বলেন, ‘এবার আবহাওয়া বেশ অনুকূলে ছিল। বেশি শীত না পড়ায় শ্রমিক পাওয়া গেছে। সেই সাথে অন্য বছর অতি ঠাণ্ডার কারণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়, এবার সেটি হয়নি। বাকি সময় যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে বাম্পার ফলনের আশা করছি।’
একই হাওরের কৃষক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘এ বছর আমরা ভালোভাবে বোরো আবাদ করতে পেরেছি। কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি। শুধু বীজ ছাড়া অন্যকিছুতে খুব একটা খরচ বাড়েনি।’
তিনি বলেন, ‘এক মাসেই ভালো ছাড়া হয়েছে। যে কারণে কীটনাশক দিতে এসেছি, যেন পোকা আক্রমণ না করে। এরপর যন্ত্রের মাধ্যমে আগাছা পরিষ্কার করব।’
তবে হবিগঞ্জ সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলায় খুব একটা হাওর নেই। এসব এলাকায় ব্যাপক পরিমাণে রোপা আমন চাষ হয়। রোপা আমন কাটার পর জমি প্রস্তুত করে বোরো আবাদে কিছুটা পিছিয়ে যায়। যদিও বর্তমানে সেখানে পুরোদমে চলছে বোরো আবাদ। কিছুদিনের মধ্যে এসব এলাকায়ও শতভাগ বোরো আবাদ শেষ হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো.আকতারুজ্জামান বলেন, ‘এবারের আবহাওয়া বোরো আবাদের জন্য বেশ অনুকূলে ছিল। যে কারণে আমরা আশা করছি আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা তা ছাড়িয়ে যাবে। তবে এখনও যেহেতু ধান ঘরে তুলতে পুরো সময় রয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে কৃষক ভাইদের ঠিকমতো জমির পরিষ্কার করতে হবে। কৃষি অফিস থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’