এখন জনপদে
0

চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমি খেজুর গুড়ের ব্যবসা বেড়েছে

খেজুরের ঘ্রাণ আর রসের ঘনত্ব বলে দেয় এখন কী মাস। হাঁড়ি ভর্তি রস আর গাছিদের ব্যস্ততায় জানান দেয় মধ্য মাঘে প্রকৃতি। এসময় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও থাকে তুঙ্গে। বড় ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য থাকে কোটি টাকার উপরে ব্যবসা করার।

রাতের শেষ ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই, শহরতলীর গাছিরা মৃদু আলোয় খুঁজে নেয় তার রসে টইটুম্বুর খেজুর গাছ।

কুয়াশা মাড়িয়ে গাছে গাছে হাঁড়ি নামানোর কাজ চলে ঘণ্টা খানেক। সূর্য উঁকি দিলে বাড়ে আরো তাড়া। প্রথম প্রহরে আমরাও ছুটলাম রসের খোঁজে। গন্তব্য চুয়াডাঙ্গার কোটালি গ্রাম।

আমাদের যাত্রাবিরতি ৭০ বছর বয়সী আমচুর আলীর বাড়ির প্রাঙ্গণে। ২ ছেলেকে নিয়ে তখন খেজুর রস থেকে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত তিনি। ৩ দশক ধরে এই কাজে যুক্ত তার পরিবার।

শীতের তীব্রতার সাথে বাড়ে তাদের ব্যস্ততাও। জানান গুড়ের মান তাপমাত্রার সমানুপাতিক। অগ্রহায়ণ থেকে রস সংগ্রহ শুরু হলেও পৌষ, মাঘে যৌবনে পা দেয় খেজুর গাছ। এই ২ মাসে গুড়ের উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ। আয়ও বাড়ে কয়েকগুণ।

গুড় তৈরির পর সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকে ঘরের বৌ ঝি রা। মানের উপর সংরক্ষণের সময়সীমা। আগে শহরতলীর হাট কিংবা পড়শি গ্রামে বিক্রি হলেও নতুন মাত্রা যোগ করেছে অনলাইন। এই কুঁড়েঘর থেকে অট্টালিকায় পৌঁছায় খেজুরের ঘ্রাণ। এই মৌসুমে ২ কোটি টাকা ব্যবসার আশা বড় ব্যবসায়ীদের।

গুড় ব্যবসায়ী মো. মিনারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সরাসরি গাছির কাছ থেকে গুড় সংগ্রহ করে নিজেরাই প্রসেসিং করি, যার কারণে আমরা একশ বছরের নিশ্চয়তা দিতে পারি। এই মৌসুমের তিন মাসে আমার ২ কোটি টাকার গুড় বিক্রির।’

আমচুর আলীর বাড়ির আঙিনা থেকে ফেরার পথে সূর্য ডুবি ডুবি। পথে আবার দেখা গাছিদের সাথে।

সূর্য ডোবার আগে ফের ব্যস্ততা বাড়ে গাছিদের। বলা হচ্ছে, শুধু চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই ২ লাখ ৭০ হাজার এমন খেজুর গাছ রয়েছে। যেখান থেকে এ বছরের গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পৌনে ৩ হাজার মেট্রিক টন। তবে ঐতিহ্যের এই গ্রামীণ অর্থনীতির আকার বাড়ার বদলে উল্টো কমছে। গাছ কমার কারণে পেশা বদল করছেন কেউ কেউ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ শিল্প বাঁচাতে এখনই প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ।

এএম